নূর চৌধুরীকে দেখে ধোঁকায় পড়েছিল কামাল: প্রধানমন্ত্রী
৫ আগস্ট ২০২২ ১৬:১০
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিম্পল লিভিং, হাই থিঙ্কিং (সাধারণ জীবনযাপন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা) এটাই ছিল আমাদের মোটো (লক্ষ্য)। ক্ষমতার জৌলুশ আরাম-আয়েশের দিকে যেন নজর না যায় সেভাবেই আমাদের মানুষ করে গেছেন মা। কামাল ছিল সাদাসিধে। কামাল এবং নূর চৌধুরী দু’জন একইসঙ্গে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৫ আগস্ট সেই নূরই প্রথম আসে আমাদের বাড়িতে। কামাল বোধহয় ধোঁকায় পড়ে গেছিল তাকে দেখে, ভেবেছিল তাদের উদ্ধার করতে আসছে। কিন্তু সে (নূর) যে ঘাতক হয়ে এসেছে সেটা বোধহয় জানত না।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী এবং শহিদ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুলতানার সঙ্গে বিয়েতে কামালের আপত্তি ছিল। কেননা আমার সঙ্গে সে খেলা করত, আমার ছোট বোনের মতো ছিল। জামাল, রেহানা, রাসেল সবাই সুলতানার খুব ভক্ত ছিল। কামালকে জোর করে রাজি করেছিলাম সুলতানার সঙ্গে বিয়ে। দুর্ভাগ্য কামালের সঙ্গে সুলতানাকেও হারাতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘ঘাতকের দল আমার ছোট ফুফুর বাসায়ও যায়। আধুনিক ফুটবল খেলা আবহানী ক্রিয়াচক্র গড়ে তোলা বা বিভিন্ন খেলাধুলায় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে কামাল। মায়ের ইচ্ছা ছিল সেজন্য মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে কামাল। তাই কামাল সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়। পরীক্ষা দিয়েছিল, পরে আমরা তার রেজাল্ট পেয়েছি, এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। তার রেজাল্ট সে দেখে যেতে পারেনি। সুলতানা, কামাল একসঙ্গেই পরীক্ষা দিয়েছিল। একজনের ভাইভা শেষ হয়েছিল আরেকজন ভাইভা শেষ করতে পারেনি তার আগেই সে না ফেরার দেশে চলে যায়।’
এ সময় ক্রীড়াবিদদের জন্য গঠন করা ফান্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যুব সমাজ খেলাধুলা সাংস্কৃতিক চর্চায় এসব দিকে যেন আন্তরিক হয়, নিজেদের আরও সম্পৃক্ত করে। সেটা আমার আকাঙ্ক্ষা। আমরা যখন সরকারে আসি ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। একটা ফান্ড গঠন করেছি। একটা বয়সে এসে ক্রীড়াবিদদের আর অর্থ উপার্জন করার ক্ষমতা থাকে না। তাই সে সময় যেন বিপদে না পরে সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই সংগঠন করতাম। কোনো ত্যাগ নিয়ে আমাদের চিন্তা ছিল না। বাবাকে দেখতাম মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন, তার আদর্শ নিয়েই পথ চলতাম। বাবা-মা আমাদের শিখিয়েছিলেন সাদাসিধে জীবনযাপন করতে হবে। সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্কিং- এটাই ছিল আমাদের মোটো। কামাল সব সময় অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে চলাফেরা করত। তার পোশাক পরিচ্ছদ জীবনযাত্রা খুবই সাদাসিধে ছিল। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির ছেলে বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে কোনো অহমিকা ছিল না।’
ছোট ভাই কামালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, কামাল এবং নূর দুজন একই সঙ্গে কর্নেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৫ ই আগস্ট সেই নূর প্রথম আসে। কামাল বোধহয় ধোঁকায় পড়ে গেছিল তাকে দেখে। ভেবেছিল তাদের উদ্ধার করতে আসছে। কিন্তু সে যে ঘাতক হয়ে এসেছে সেটা বোধহয় জানত না। প্রথম তারা কামালকেই গুলি করে। এরপর একে একে পরিবারের সবাইকে হত্যা করে।’
সারাবাংলা/এনআর/এনএস