চলন্ত বাসে ডাকাতি ধর্ষণের ঘটনায় আরও দুইজন গ্রেফতার
৫ আগস্ট ২০২২ ১৭:১৭
টাঙ্গাইল: কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে যাত্রীবেশে উঠে যাত্রীদের হাত-পা চোখ বেঁধে মারধর, ডাকাতি ও এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মো. আব্দুল আউয়াল ও নুরনবীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ নিয়ে চলন্ত বাসে ডাকাতি এবং গণধর্ষণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হলো।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, রিমান্ডে থাকা আসামি রাজা মিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে এক অভিযানে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গতরাত ৫টার দিকে কালিয়াকৈরের টান সূত্রাপুর এলাকা থেকে আউয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সকাল ৯টার দিকে নুরনবীকে গ্রেফতার করা হয়। সে সময় নুরনবীর কাছ থেকে ডাকাতির সময় ছিনিয়ে নেওয়া একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
আউয়াল (৩০) কালিয়াকৈরের কাঞ্চনপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে। নুরনবী (২৬) কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধোনারচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাহেজ উদ্দিনের ছেলে।
হস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে ডাকাত দলের এক সদস্য রাজা মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার কাছ থেকে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে লুট করা তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
রাজা মিয়া টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। পেশায় টাঙ্গাইলের ঝটিকা বাসের চালক।
রাজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। রাজা মিয়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে ঈগল এক্সপ্রেসের একটি বাস কুষ্টিয়ার ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে যাত্রীবেশে ডাকাত দল উঠে প্রথমে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে যাত্রীদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর এবং লুটের পর এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। ডাকাত দল বাসটি ঘুরিয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের সামনে ফেলে রেখে নেমে যায়।
ধর্ষণের শিকার নারীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে বৃহস্পতিবার দুপুরে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এরপর তাকে আদালতে পাঠানো হয়। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
পুলিশ জানিয়েছে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য বিরতি দেয়। রাত দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে কাঁধে ব্যাগ বহন করা ১০-১২ জন তরুণ যাত্রী সেজে বাসে ওঠে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর ওই তরুণরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের সবাইকে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। এরপর সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়। যাওয়ার আগে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে তারা। তারা বাসটি বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে তিন ঘণ্টার মতো নিয়ন্ত্রণে রাখে। পরে পথ পরিবর্তন করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে বালুর স্তূপে বাসটি উল্টিয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ডাকাত চক্রের মোট তিনজনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা গেল।
সারাবাংলা/একে