Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পশ্চিমাঞ্চলের রেলক্রসিং যেন মৃত্যুফাঁদ, অর্ধেকে নেই গেটকিপার

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ আগস্ট ২০২২ ০৮:৪৩

রাজশাহী: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ১৫৬৮ কিলোমিটার পথে রেলক্রসিং ১৪৩৯টি। এসব রেলক্রসিংয়ের অর্ধেকই মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ রেলক্রসিংয়েই নেই গেটকিপার। গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল রেলক্রসিং গুলোতে গেটকিপার থাকলেও অনেক সময়ই দেখা যায় দায়িত্বহীনতা। এতে রেলের মতো নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও ঘটছে দুর্ঘটনা। নির্বিচারে ঝরছে তাজা প্রাণ।

রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। প্রায় দেড় হাজার ক্রসিংয়ে রেলের নিয়োগপ্রাপ্ত মাত্র ১৮৯ জন। তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অস্থায়ীভাবে ৭০০ জন গেটকিপার আছে। বাকিগুলোতে কোনো গেটকিপার নেই।

বিজ্ঞাপন

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগ দুইটি। একটি পাকশী ও আরেকটি লালমনিরহাট। পাকশী বিভাগের আওতাধীন অনুমোদিত রেলক্রসিং ৮০৮টি এবং অননুমোদিত বা অবৈধ গেট রয়েছে ১২৩টি। আর লালমনিরহাট বিভাগে অনুমোদিত বা বৈধ রেলক্রসিং আছে ৪১৭টি এবং অননুমোদিত বা অবৈধ গেট ৯৯টি।

সেই হিসেবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় ১ হাজার ৪৩৯টি লেভেল ক্রসিং গেটের ২২২টি অননুমোদিত বা অবৈধ। আর এসব অননুমোদিত গেটের মধ্যে এলজিইডির ১৮৪টি। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের রয়েছে ৫টি। বাকিগুলো ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের অধীনে। ১৪৩৯টি রেলক্রসিংয়ের জন্য মঞ্জুরিকৃত গেটকিপার ছিল ১৮৯ জন। এদের মধ্যে ১১৯ জন গেটকিপার স্বপদে কর্মরত। বাকি ৭০ জনকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মঞ্জুরিকৃত ১৮৯ জন ছাড়াও প্রায় ৭০০ জন গেটকিপার প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছেন। ৬২০টি রেলক্রসিংয়ে কোনো গেটকিপার না থাকায় গেটগুলো পুরোপুরি অরক্ষিত।

বিজ্ঞাপন

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বৈধ ও অবৈধ এসব লেভেল ক্রসিং গেটের মধ্যে ৮১৯টিতে গেটম্যান থাকার কথা বলা হলেও এসব গেটম্যানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আছে। মঞ্জুরিকৃত ১১৯ জন গেটকিপার কোনোরকমে তাদের দায়িত্ব কিছুটা পালন করলেও প্রকল্পের মাধ্যমে গেটকিপারের দায়িত্বে থাকা ৭০০ জনের অধিকাংশই তাদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেন না। আবার যে লেভেল ক্রসিং গেটগুলোতে গেটম্যান নেই, সেগুলোর সামনে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড থাকলেও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ২২২টি ক্রসিংয়ের অধিকাংশের সামনেই নেই সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড। ফলে অনেক সময় পথচারীরা লেভেল ক্রসিং অতিক্রমের সময় অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। একটি ক্রসিংয়ে সাধারণত তিন থেকে ১২ জন গেটকিপার থাকা দরকার, কিন্তু তা নেই। এছাড়া স্থায়ী গেটকিপারও কম। প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু গেটকিপার আছেন, অনিয়মিত বেতনে চাকরি করেন তারা। ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও অবহেলা রয়েছে। বেতনের দাবিতে তারা সম্প্রতি আন্দোলনও করেছেন। গেটকিপারদের একটা বড় অংশ হতাশায় ভুগছেন।

কারও কারও কর্মঘণ্টা ১৬ ঘণ্টা, নেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও। তাই নিজ দায়িত্ব অন্যকে দিয়ে চালিয়ে নেয়ার প্রবণতা আছে। তা ছাড়া ‘ইন্টারলকিং’ ও ‘নন-ইন্টারলকিং’ পদ্ধতি বিদ্যমান রেলে। এমন অনেক ক্রসিং আছে, যেখানে ট্রেন আসার বার্তা পান না গেটকিপাররা। অনুমানের ভিত্তিতে বা ট্রেন আসার শব্দ শুনে তারা যান চলাচল বন্ধ করে দেন। বিলম্বে ট্রেন এলে অনেক সময় গেটবার দিতে দেরি হয়ে যায়। কিছু স্থান আছে, যেখানে গেটকিপার নেই। সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায়িত্ব সেরেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ের হিসাব মতে, পশ্চিমাঞ্চলে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ১৯৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওসব দুর্ঘটনায় ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রেলগেটে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই রেলক্রসিং পার হতে যাওয়া বাস, মাইক্রোবাস ও ছোট যানবাহনের আরোহী। সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ২০১৯ সালের ২০ জুলাই দুর্ঘটনায় বর-কনেসহ ১২ জন প্রাণ হারান। এরপরও বিভিন্ন ছোটবড় অনেক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

রেল সংশ্লিষ্ট অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, বৈধ-অবৈধ রেলক্রসিংয়ের মার-প্যাচসহ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এভাবেই প্রতিনিয়ত ঘটছে রেল দুর্ঘটনা। রেল পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং অন্যান্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরই সৃষ্ট পশ্চিম রেলের এসব অরক্ষিত রেলক্রসিং। আর এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণেই ট্রেন চলাচলে প্রতিনিয়ত বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

রেলওয়ে আইন ১৮৯০ এর ১২৮ ধারায় বলা হয়েছেÑ কোনো ব্যক্তি ট্রেনের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলে বা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তার সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিনিয়ত সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধি অবৈধভাবে রেল ক্রসিং গেট তৈরি করছেন। যার কারণেই প্রতিনিয়ত অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনাও।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, নিজেদের প্রয়োজনে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি কিংবা অন্যরা লেভেল ক্রসিং গেট সৃষ্টি করছে, যা অবৈধ। প্রতিনিয়ত এভাবে অবৈধ গেট সৃষ্টি হলে রাতারাতি সেখানে জনবল দেয়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সম্ভব না। রেলের নিয়ম অনুযায়ী কোন এলাকায় রেলক্রসিং তৈরি করতে হলে আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। কিছু টাকা ব্যাংক ডিপোজিট করতে হবে। সেখানে গেটকিপারদের বেতন ভাতাও থাকবে। ১০ বছর হয়ে যাওয়ার পর রেলের দায়িত্বে চলে আসবে। এরপর রেল সবকিছুর দেখাশোনা করবে।

তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিরা জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে রেলক্রসিং তৈরি করে দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুদিন পর তা অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে যার দোষ রেলের ঘাড়ে এসে পড়ছে। এত রেলক্রসিং করলে তো আমরা গেটকিপার দিতে পারবো না। অবৈধ রেলক্রসিং যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

সারাবাংলা/এএম

সারাবাংলা/এএম

গেটকিপার পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রেলক্রসিং

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর