Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আর সময় নেই, সরকারকে পরাজিত করতে হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ আগস্ট ২০২২ ১৮:০৭

ঢাকা: জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘মরার ওপরে খাড়ার ঘা’ হিসেবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর সময় নেই। সবাইকে জেগে উঠতে হবে। সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

শনিবার (৬ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূর আলমের মৃত্যুর ঘটনায় এ সমাবেশ আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

বিজ্ঞাপন

সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ভয়ংকর প্রভাব ফেলবে সমগ্র অর্থনীতির ওপরে। এটা বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এটা (জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি) হচ্ছে মরার ওপরে খাড়ার ঘা।’

‘আর সময় নেই। আমাদের জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠে এদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আসুন, আমরা সেই লক্ষ্যে আরও দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলি। ছাত্র দলের এই সমাবেশ থেকে আমি আহ্বান জানাতে চাই, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ে আপনারা ঐক্য গড়ে তুলুন। আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন আজ জাতির প্রয়োজনে, আমাদের ভবিষ্যতে প্রজন্মের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ, অগণতান্ত্রিক, দানবীয়, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এই জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাবে পরিবহন ব্যয়, পরিবহন ভাড়া। একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য— চাল-ডাল-আটা-তেল আবার দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মাঝ খান থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কে? ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের সাধারণ মানুষ, যারা দিন আনে দিন খায়। এভাবে বার বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে মানুষের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে। মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে, মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আজ আমরা অন্যায়-নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার। এই সরকার ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। তারা আজ বাংলাদেশের সমস্ত অর্জন কেড়ে নিচ্ছে। সেজন্যই এদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া একমাত্র দেশপ্রেমিকের কাজ।’

তিনি বলেন, ‘সরকার আইএমএফের (ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড) কাছে ঋণ চেয়েছে প্রায় চারশ’ কোটি ডলার। কারণ, তারা এত মিথ্যাচার করে এসেছে যে, রিজার্ভে এত টাকা আছে, এত ডলার জমা আছে- তাদের কোনো চিন্তার কারণ নেই। আজ রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবির কাছে ঋণ চেয়েছে। আইএমএফ’র ঋণের শর্ত খুব শক্ত। তারা বলেছে যে, কোথাও কোনো অধিক ব্যয় করা যাবে না। তারা বলেছে, যেসব সমস্ত খাতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে সেগুলো প্রত্যাহার করা হোক।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অন্যায়-অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে কথা বললে তারা (সরকার) বলে যে, চক্রান্ত। চাক্রান্ত তো করেন আপনারা। বার বার বলেছি যে, কে চক্রান্ত করছে বলেন। আমরা চক্রান্ত করি না। আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা নিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণের কাছে যাচ্ছি এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা রাজপথে ফয়সালা করব।’

‘আমাদের নেতা তারেক রহমান খুব পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, ফয়সালা হবে রাজপথে। আমরা সেই বাংলাদেশ ফিরে পেতে চাই, যে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেজন্য আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের ও জনগণকে সংগঠিত করে এবং সকল রাজনৈতিক শক্তিকে সংগঠিত করে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা। তাহলেই নুরে আলম ও আবদুর রহিমের যে রক্ত সেই রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নুরে আলম ও আবদুল রহিম জীবন দিল কেন? জনগণের দাবি আদায় করতে গিয়ে। এই সরকারের আন্দোলনের সফল করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’

সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই সমাবেশ হয়। সমাবেশের ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ছাত্রদল মহানগর উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম, ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে সমবেত হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় থেকে নয়া পল্টনে কার্যালয়ের সামনে ছাত্র দলের নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের পরিচালনায় ছাত্র সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম আলীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, ছাত্র দলের রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসার মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আখতার হোসেন প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

আওয়ামী লীগ বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর