বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রের বাইরে না
৬ আগস্ট ২০২২ ২০:২৫
দীর্ঘস্থায়ী করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির করে দিয়েছিল। যখন সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বিশ্বের দেশগুলো ঠিক তখনই ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’র মতো দেখা দিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি সাম্প্রতিক চীন-তাইওয়ান অস্থিরতাও বিশ্বের সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কপালেই চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। এই চিন্তার বাইরে নেই বাংলাদেশও। বরং সরাসরি চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বের চাপে রয়েছি আমরা।
বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক বা প্রভাব বিস্তারকারী কোন দেশ না। বরং বৈশ্বিক রাজনীতির মেরুকরণে নিজেদের অবস্থান ধর রাখতেই ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা’। বৈশ্বিক এমন বিরূপ বাস্তবতায় সব দেশই তার অর্থনীতিকে ধরে রাখতে বিভিন্ন পলিসি গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সংকোচন ও বিয়োজন করে রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কোনো কোনো দেশকে আবার নির্ভর করতে হচ্ছে আইএমএফ’র ঋণ সহায়তার ওপর। বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলায় এসবই রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পলিসির অংশ— এটা বুঝতে অর্থনীতিবিদ হতে হয় না।
বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইতোমধ্যে অনেক দেশ দাম সমন্বয় করেছে। এদের মধ্যে আরব আমিরাতের মতো ষষ্ঠ তেল রফতানিকারক দেশও রয়েছে। আর এটাই বাস্তবতা। কিন্তু বাংলাদেশ এই সমন্বয়ের বাইরে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে তেলের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ সরকার।
দীর্ঘ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপরে স্থিতিশীল রেখে সব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রাখতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে জনগণের ভোগান্তি হবে— এটা জনগণের প্রতি আজীবন সংবেদনশীল নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা ভালো করেই জানেন। এ জন্যই তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে শেষ অবধি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। জানা গেছে, গত ছয় মাসে জ্বালানি খাতে সরকারকে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
একজন সুদক্ষ সরকারকে শুধু বর্তমানের দিকে তাকালে হয় না। ভবিষ্যৎও পড়তে হয়। আর ভবিষ্যৎ পথের অন্ধকার দূর করতেই জনগণের বিরূপ মনোভাব হবে জেনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আর এই সিদ্ধান্ত এসেছে দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই।
মানুষের অনেক কষ্ট হবে। সুযোগ বুঝে অযৌক্তিক ও অনৈতিকভাবে জনগণের ওপর এর কু-প্রভাব অনেক বেশি মাত্রায় পড়বে। দিনমজুর-শ্রমিক থেকে শুরু করে নিম্ন বেতনের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী অর্থাৎ গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের আয়ের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের দূরত্ব চালিয়ে নিতে হিমশিম খাবে। এর তিক্ত ফল একজন মধ্যবিত্ত হিসেবে আমাকেও ভোগ করতে হবে। তারপরও আমি মনে করি, প্রতারণার চেয়ে এটা ভালো। অথৈ সাগরে পড়ে হাবুডুবু খাওয়ার চেয়ে একটু কষ্ট করে কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দেওয়াই উত্তম।
বিশ্বে মহামারি হবে, যুদ্ধ হবে, আর আমাদের কোনো আঁচড় লাগবে না— এটা মনে করা বোকামি। এমন কোনো জাদুকাঠি বিশ্বের কোনো সরকারের হাতেই নেই। আর এই সুযোগ বুঝে যেসব রাজনৈতিক দল মিথ্যা প্রচারণা করছেন তারা মূলত দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। মূলা-কলা দেখিয়ে লাভ হবে না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, দেশের মানুষ এসব প্রতারণা ভালো করেই বুঝে।
আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, দেশের প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার সব পর্যায়ের মানুষ একজন শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখে। কারণ, তিনি দেশের সম্পদ অপচয় রোধ করে, সংযমী হয়ে দৃঢ় ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন। আমাদের পূর্বসূরীরা যেমন অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে বঙ্গবন্ধুর ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আর তাদের আস্থার ফসল ‘স্বাধীনতা’ ঘরে এসেছিল। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে বাংলাদেশ এখন উন্নত বিশ্বে পদার্পণের সিঁড়ি অতিক্রম করছে। আগামী দিনগুলোতেও ধৈর্য্যের সঙ্গে দেশের প্রতিটি মানুষের শেখ হাসিনার পাশে থাকা উচিত। কারণ, তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের মহাসড়কের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। জয় বাংলা।
লেখক: উপ-শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/পিটিএম