ভাড়ার তালিকা নেই বাসে, কাটা হচ্ছে যাত্রীর পকেট
৭ আগস্ট ২০২২ ১৩:৫৪
ঢাকা: ঢাকার গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার মূল্য তালিকা টানানো হয়নি। ফলে বাসের চালক ও সহকারীরা ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে। ঢাকায় যেখানে বাসের ভাড়া ১৬ শতাংশ সরকার বাড়িয়েছে, সেখানে তারা ২০ থেকে ৫০ টাকার বাস ভাড়ায় বাড়তি ভাড়ার চেয়েও ১ থেকে ২ টাকা বেশি রাখছে।
ভাঙতি না থাকার অজুহাতে ১ থেকে ২ টাকা বেশি রাখাকে প্রথমদিনেই তারা ‘নিয়মে’ পরিণত করেছে! যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে গিয়ে চালক ও সহকারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন। যাত্রীরা তাদের ক্ষোভের ঝড় তুলেছেন বাসের আসনে আসনে।
রোববার (৭ আগস্ট) রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার ঢাকায় গণপরিবহনে ভাড়া বাড়িয়েছে ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। আর দূরপাল্লার বাসে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। নগরীতে ঘুরে দেখা গেছে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়া মানছে না কেউ। টানানো হয়নি নতুন ভাড়ার তালিকা।
মহাখালীতে কথা হলে রইছ পরিবহনের সহকারী সুবুর আলী সারাবাংলাকে বলেন, মহাখালী থেকে শ্যামলীর আগে ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন ভাড়া ৫ টাকা বেড়েছে। ভাড়া তো ১৬ শতাংশ ভাড়ার কথা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাড়া ৪ টাকা ভাড়ার কথা। কিন্তু ২৪ টাকা নেওয়া তো কষ্ট। তাই ভাড়া ২৫ টাকাই রাখা হচ্ছে। কিন্তু সরকারি হিসাবে এই গন্তব্যে ভাড়া বেড়েছে ৩ টাকা ২৫ পয়সা। অর্থাৎ পূর্বের ২০ টাকার ভাড়ার গন্তব্যে যেতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১ টাকা ৭৫ পয়সা বেশি রাখা হচ্ছে।’
রইছ পরিবহনের আরেক বাসের সহকারী জানান, মহাখালী থেকে সাভারের আগের ভাড়া ছিল ৫০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। ১০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। ভাড়া ৮ টাকা বাড়িয়েছে সরকার, তাহলে ২ টাকা বেশি কেন নেওয়া হচ্ছে তার উত্তর দিতে পারেনি ওই সহকারী।
মহাখালীতে কথা হলে আজমেরী গ্লোরির সহকারী জাহিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা নিচ্ছি। ৫০ টাকার ভাড়া এখন ৬০ টাকা। ১ টাকা বা দুই টাকার নোট থাকে না। তাই ১ টাকা বা দুই টাকা বেশি নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘গাড়িতে এখনো ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তাই অনেকে ভাড়া দিতে চায় না। কথা-কাটাকাটি করে।’
বলাকা পরিবহনের চালক শান্ত সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা নেওয়া হয় কারণ ১ টাকা থাকে না। আগে যখন ২০ টাকার ভাড়া ২৬ টাকা হয়েছিল তখন তো আমরা ২৫ টাকা নিয়েছি। আমরা ভাড়া বেশি নিচ্ছি না।’
এদিকে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহনের দেখাও কম মিলছে। বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় পার করতে হচ্ছে। ফার্মগেটে কথা হলে ফাহিম নামের একজন বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। বাস ভাড়া গেল পরদিনই। অথচ বাজারে সওয়াবিন তেলের দাম এখনও কমেনি। সরকার দাম কমানোর পরও আগের দামেই ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। সবাই শুধু সব চাপ জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়। জনগণকে চাপে রাখতে সরকার ও ব্যবসায়ী কেউ পিছপা হচ্ছে না। পরিবহনের মালিকরা তো নতুন ভাড়ার নামে বেশি ভাড়া আদায় করে এখনও পকেট কাটছে।’
শাহবাগে কথা হলে শিকড় পরিবহনের একজন যাত্রী হিমেল বলেন, ‘অল্প জায়গাতেও ভাড়া ৫ টাকা বেড়েছে। আমাদের আয় কতটা বেড়েছে। আগে যে বেতন পেতাম এখনও তাই পাচ্ছি। এই টাকা দিয়ে ঘর সংসার চলছে না। এরমধ্যে আবার ব্যয় বাড়ল আরেক দফা। এগুলো মেনে নেওয়া কষ্টকর।’
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারের জন্য যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৪০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা। আর মহানগরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা।
বৈঠক শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো দেশের চেয়ে আমাদের এখানে জ্বালানি তেলের দাম কম। তেলের দাম বাড়লে আমরা স্টেক হোল্ডাররা বসে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিই।’
এদিকে বাসে নতুন ভাড়ার তালিকা না টানানো প্রসঙ্গে বিআরটিএর প্রশাসন উইংয়ের পরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে বিকেলের মধ্যেই গণপরিবহনে নতুন ভাড়ার তালিকা টানানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে গণপরিবহন যেন অতিরিক্ত ভাড়া নিতে না পারে সে জন্য সবগুলো টার্মিনালে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসেছে। তারা বিষয়টি তদারকি করছে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে