টাকা ছাড়া হয় না ময়নাতদন্ত, অসহায় মৃতব্যক্তির স্বজনরা
৮ আগস্ট ২০২২ ০৮:৩৭
রাঙামাটি: রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে গোসল করতে নেমে রুবায়েত ইসলাম (২৬) নামে চট্টগ্রামের এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৬ আগস্ট) বিকেলে তার লাশ উদ্ধার করে নেওয়া হয় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। কিন্তু চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় রোববার পর্যন্ত ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পরে বাধ্য হয়েই তাদের চাহিদা পূরণ করে ময়নাতদন্ত করতে হয়েছে স্বজনদের। যদিও সিভিল সার্জন বলছেন, ময়নাতদন্তের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, শনিবার দুপুরে কাপ্তাই হ্রদে ট্যুরিস্ট বোট নিয়ে ঘুরতে বের হন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে বেড়াতে আসা চার বন্ধু। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হ্রদের দারোগা পাহাড় এলাকায় বোট থেকে লাফিয়ে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যান রুবায়েত ইসলাম। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার বাসিন্দা।
এদিকে পানিতে ডুবে মৃত রুবায়েতের বড় ভাইয়ের শ্বশুর খোরশেদ আলম বাবু অভিযোগ করেন, রোববার সকালে আমরা ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে যাই। সেখানে ডোম আমাদের জানায় ময়নাতদন্তের জন্য নরমালি করে দিলে আমরা যা দিই, তাই হবে। তবে ভালো করে কাজ করে দিলে তাকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে বিষয়টি দায়িত্বরত ডাক্তারকে জানাই। কিন্তু ডাক্তার তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বেঁকে যান এবং সাড়ে ৪ হাজার টাকার নিচে ৫ টাকা কমেও লাশ কাটবেন না বলে জানান। পরে বাধ্য হয়েই তার কথা মতো ময়নাতদন্ত করতে হয়েছে। সকাল থেকে মর্গে ঘুরে ঘুরে দুপুর ১টায় লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান মহসীন রোমান জানান, গতকাল কাপ্তাই হ্রদে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনায় মৃত যুবকের এক স্বজন আজ (রোববার) বেলা ১১টায় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা আমাকে জানান, ডোম বলছে পোস্টমর্টেম যদি ভালো করে করা হয়, তাহলে এক রেট। আর নরমালি করা হলে আরেক রেট। পরে আমি হাসপাতালের আরএমওকে বিষয়টা জানাই। তিনি আমাকে জানান, এটা আমাদের বিষয় না। এটা সিভিল সার্জন দেখেন। আমি পরে আমি বলি, আপনাদের যদি লাশ কাটার টাকা নিয়ে আলাদা রেট থাকে, সেক্ষেত্রে চার্ট থাকলে তবে সেটা ঝুলিয়ে রাখেন, মানুষ দেখুক।
রোমান বলেন, রাঙামাটিতে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই অসহায়। সিভিল সার্জনকে এ ব্যাপারে কিছু জানালে তিনি বিরক্ত হন বলে আমাদের মনে হয়।
এদিকে এ ব্যাপারে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের মর্গের কর্মরত ডোম বিনয় কুমার ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে আলাপ করবেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শওকত আকবর জানান, মৃতের স্বজন ও ডোমের মধ্যে এক ধরনের কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে আমি তাদের নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করেছি। তারা ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বুঝে নিয়ে চলে গেছেন।
রাঙামাটি জেলার সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না। টাকা না দেওয়ায় লাশ না কাটার বিষয়টি সঠিক নয়। লাশ কাটবে কী কাটবে না, সেটা ডোমের বিষয় নয়। যথাযথ প্রমাণ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
সারাবাংলা/এএম