৫ম শ্রেণি পাস স্বপনের কারখানায় তৈরি হয়েছে ১০ হাজার মোবাইল
৮ আগস্ট ২০২২ ২১:২৬
ঢাকা: রাজধানীর গুলিস্তানে একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল মোবাইল এবং আইএমইআই (IMEI) নম্বর পরিবর্তনের মূল কারিগর ৫ম শ্রেণি পাস স্বপন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় বিপুল পরিমাণ মোবাইল উদ্ধার ও আইএমইআই পরিবর্তন করার যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে র্যাব-৩ এর একটি দল গুলিস্তান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব নকল মোবাইল ও আইএমইআই পরিবর্তনের যন্ত্রপাতি জব্দ করে র্যাব। এদিন বিকেলে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘র্যাব-৩ চোরাই ও ছিনতাইকৃত মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা দল নকল মোবাইল তৈরির কারখানার সন্ধান পায়।’ এ পর্যন্ত ওই কারখানায় তৈরি প্রায় ১০ হাজার মোবাইল দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান কর্নেল আরিফ।
অভিযানে ভূয়া আইএমইআই মোবাইল ১৪৯৫টি, মোবাইলের নকল ব্যাটারি ৩৩৭০টি, হেডফোন ১২০টি, চার্জার ক্যাবল ৩৮৫টি, নকল মোবাইলের চার্জার ১১৫৫টি, সেলার মেশিন একটি, হিট গান মেশিন একটি, এলসিডি মনিটর ৪৩টি, ইলেকট্রিক সেনসর ১০টি, আইএমইআই কাটার মেশিন ১৩টি এবং বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার ও ভুয়া বারকোড উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বপন জানায়, দুই বছর আগে সে ঢাকায় কাজের সন্ধানে এসে প্রথমে মতিঝিলে একটি অফিসে পিয়নের চাকরি নেয়। ওই অফিসে একজন স্টাফের মোবাইল মেরামত করতে গিয়ে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের এক কারিগরের সাথে তার পরিচয় হয়। তার মাধ্যমে সে জানতে পারে এই ব্যবসাটি লাভজনক। তখন সে বিনা বেতনে ওই সার্ভিসিং কারিগরের সাথে কাজ শিখতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের ওপর বেশ দক্ষতা অর্জন করে এবং ইউটিউব থেকে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জ্ঞান অর্জন করে। এক পর্যায়ে সে নিজেই অভিনব পদ্ধতিতে মোবাইল তৈরি এবং আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজ শুরু করে।
স্বপন জানায়, প্রতিদিন সে ৫০টি মোবাইল তৈরি করতে পারতো। ওই কারখানায় আরও কারিগর ছিল। তারাও তাকে সহযোগিতা করতো। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে খুচরা বিক্রেতারা ওই কারখানা থেকে নকল মোবাইল কিনে নিয়ে নিয়ে যেত। এসব মোবাইল তৈরি করতে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হতো। তবে তারা বিক্রি করতো ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়। মোবাইলের বিভিন্ন খুচরা যন্ত্রাংশ সংযুক্ত করে তৈরি করা এসব মোবাইলের গায়ে সিলার ও হিটার মেশিনের সহায়তায় মেইড ইন চায়না, মেইড ইন ভিয়েতনাম, মেইড ইন ফিনল্যান্ডসহ বাহারী নাম লিখে আসল মোবাইলের মতো প্যাকেটিং করা হতো।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ধরনের মোবাইলগুলোর ক্রেতা। এসব মোবাইল সিম ইনসার্ট করলে ‘বিটিআরসির ডাটাবেজে হ্যান্ড সেটটি নিবন্ধিত নয়’ এই মেসেজ আসে। এই মোবাইলগুলো বিক্রির পর অধিকাংশ গ্রাহকই কোনো না কোনো সমস্যার কারণে অভিযোগ করতো। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা গ্রাহকের কাছ মোবাইলগুলো সার্ভিসিংয়ের নামে কারখানায় পাঠিয়ে দিত। কিছুদিন পর মেরামত করে তারা আবার গ্রাহকের কাছে ফেরত দিত। গ্রাহক দোকানে অবস্থানকালে বুঝতে পারতেন তার মোবাইল ঠিক আছে। কিন্তু দোকান থেকে বের হওয়ার পরেই মোবাইলে সমস্যা দেখা দিত। তখন গ্রাহক আবার অভিযোগ করলে তারা মোবাইলটি ফেরত নিয়ে পুনরায় মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিত।
এভাবে গ্রাহক হয়রানি হতে হতে মোবাইল মেরামতের আশা ছেড়ে দিয়ে নষ্ট মোবাইলটি আর ফেরত নিতে আসতেন না। তখন ওই মোবাইল পুনরায় মেরামত করে নতুন গ্রাহকের কাছে তারা বিক্রি করে দিতো। এ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০ হাজারের মতো মোবাইল বিক্রি করেছে। এসব নকল মোবাইল বিক্রি করে চক্রটি প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। স্বপন ৫ম শ্রেণি পাস হলেও প্রযুক্তিগতভাবে সে অত্যন্ত দক্ষ। সে এক বছর যাবৎ কারখানাটি পরিচালনা করলেও তার কোনো লাইসেন্স নেই। ওই কারখানার অন্যান্য কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। আসাসির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম