‘রক্তনালী ব্লক হলেও হাত-পা-আঙ্গুল না কেটে সুস্থ হওয়া সম্ভব’
৮ আগস্ট ২০২২ ২৩:৩২
ঢাকা: দেশে এখন আর রক্তনালীর ব্লকের কারণে রোগীদের হাত, পা এবং আঙ্গুল কেটে ফেলতে হবে না। এমনকি অপারেশন ছাড়াই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের এই অঙ্গহানি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ ব্লক অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞরা। বিএসএমএমইউয়ে রক্তনালী রোগের যুগান্তকারী চিকিৎসা বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য নিয়ে ‘আপডেট অব ভাসকুলার সার্জারি’ বিষয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ভাসকুলার বিভাগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাকিবুল হাসান। এছাড়াও স্বাগত বক্তব্য দেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের রেসিডেন্ট শিক্ষার্থী ডা. সমরেশ চন্দ্র সাহা। সেমিনারে জানানো হয়, রক্তনালীর রোগের কারণে মানুষের অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যে রোগীদের অপারেশন সম্ভব নয় বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই তাদের অঙ্গ রক্ষা করা সম্ভব।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, রক্তনালীর ব্লকের কারণে পায়ের গ্যাংরিন হয়। স্টেমসেল থেরাপি ও প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপির মাধ্যমে নতুন রক্তনালী তৈরি করে বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করে রোগীদের পঙ্গুত্ব বরণ করা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসায় লেজার থেকে শুরু করে সবধরনের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে এই বিভাগে। তাছাড়া আঁকাবাঁকা শিরা না কেটে আরএফএর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান শিগগিরই চালু হবে। এছাড়া রক্তনালী ব্লক, এনিউরিজম, ডিভিটি, টিউমার, ম্যালফরমেশন ইত্যাদি চিকিৎসাসেবা চালু আছে।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, বিএসএমএমইউয়ে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য ফিস্টুলা নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে। ভেনাসজনিত পায়ের আলসার ফোর লেয়ার ব্যান্ডেজ মাধ্যমে এই ক্ষত দূর করা সম্ভব হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের আধুনিক ডুপ্লেক্স স্ক্যান ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ জন রোগীর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও বহির্বিভাগে ৫০-৬০ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ছাত্রদের নিয়মিত শিক্ষাদান ছাড়াও গত দুই বছরে ছয়জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভাসকুলার সার্জন তৈরি এই বিভাগটির সাফল্যের মধ্যে অন্যতম।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এমনভাবে গড়ে তুলছে যাতে সবধরনের আধুনিক চিকিৎসা এখানেই দেওয়া সম্ভব হয়। রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয়। যেসব বিষয়ে এর আগে খুব একটা উন্নতি হয়নি, সেসব বিষয়ের উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্ল্যাস্টিক সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, থোরাসিক সার্জারি, ইনফার্টিলিটি ইত্যাদি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসা সেবার সম্প্রসারণে স্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনের আমলে গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গবেষণার জন্য সরকারের যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে সেখান থেকে চার ভাগের এক ভাগ (২৫ কোটি টাকা) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পাবেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা বিরাট অর্জন।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম