‘বঙ্গমাতার ত্যাগ ও অকুণ্ঠ সমর্থনেই শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু’
৮ আগস্ট ২০২২ ২৩:৫৩
ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গমাতার নীরব আত্মত্যাগ, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও অকুণ্ঠ সমর্থনে শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু, আর বঙ্গবন্ধু থেকে হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা।
সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’র ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. মো. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিজেই লিখেছেন, আমার জীবনের দুটি বৃহৎ অবলম্বনের প্রথমটি হলো- আত্মবিশ্বাস, আর দ্বিতীয়টি হলো- আমার স্ত্রী আকৈশর গৃহিণী।’
বঙ্গমাতার চারিত্রিক দৃঢ়তা সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দিনের পর দিন কারাগারে কাটিয়েছেন। তবে ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারে বেড়ে ওঠা দৃঢ়চেতা বঙ্গমাতা নিজে যেমন ভেঙে পড়েননি তেমনি বঙ্গবন্ধুকে সাহস যুগিয়েছেন এবং সুপরামর্শ দিয়েছেন।’
বঙ্গমাতার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না থেকেও তার যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ছিল তা অনেক প্রাজ্ঞ, বর্ষীয়ান নেতার মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় কঠিন। বঙ্গমাতা কোমল স্নেহে ও কঠোর অনুশাসনে সন্তানদের সুযোগ্য করে গড়ে তুলেছিলেন।’
বঙ্গমাতার চিন্তাধারা অত্যন্ত পরিপক্ক ও দূরদর্শী ছিল উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু যখনই জেলে যেতেন, তখনই তাকে লেখার জন্য বঙ্গমাতা তাগিদ দিতেন, সেইসঙ্গে খাতা পৌঁছে দিতেন। বঙ্গমাতার কারণেই আমরা পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর লিখিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’। আর এগুলো এখন আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ।”
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর মনের কথা অকপটে ঘোষণার ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার মূল্যবান পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথ সুগম করেছে বলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র উপদেষ্টা কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। স্মরণসভায় বঙ্গমাতার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা আত্মীয়-স্বজনকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আত্মীয়-স্বজনকে দেখাশোনা করাসহ সবসময় তাদের খোঁজ খবর তিনি রাখতেন।’
কাজী আকরাম বলেন, ‘বঙ্গমাতা অত্যন্ত অতিথি পরায়ণ ছিলেন এবং তিনি মানুষকে নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াতে ভালোবাসতেন। তিনি অনেক রাজনীতিবিদের চেয়েও অনেক দূরদর্শী ছিলেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২৪ বছরের লড়াই সংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপের কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্যের শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শ দিয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপটায়, পারিবারিক সমস্যায়, সিদ্ধান্তের দোলাচলে বঙ্গবন্ধুকে তিনি সবসময় আগলে রেখেছেন।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং বঙ্গমাতা- এই তিনটি একসূত্রে গাঁথা এবং পরস্পর অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধু ছাড়া যেমন বাংলাদেশ ভাবা যায় না, তেমনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সাফল্যের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন। স্মরণসভায় সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রোকেয়া সুলতানা রাকা, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বক্তব্য দেন।