২ বছরের প্রকল্প ঠেকছে ১০ বছরে, বাড়ছে ব্যয়ও
১০ আগস্ট ২০২২ ১৩:৪৩
ঢাকা: দেশের মুদ্রণ শিল্প কারখানাগুলোর একটি বড় অংশ পুরানো ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। এই শিল্প পরিবেশবান্ধব জায়গায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে দুই বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ২০১৬ থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প বায়স্তবায়নেই লেগে যাচ্ছে ১০ বছর।
‘বিসিক মুদ্রণ শিল্পী নগরী’ প্রকল্পে বিরাজ করছে এমন অবস্থা। সেইসঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। প্রকল্পের শুরু থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ১২ হাজার টাকা। এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫৭ দশমিক ২২ শতাংশ। সেজন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বারবার প্রকল্প সংশোধনের বিপক্ষে আমাদের কঠোর অবস্থান। এমনকি একনেক বৈঠকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারপরও কিছু ক্ষেত্রে বাস্তব কারণে সংশোধন করতে হয়। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যদের বলা হয়েছে, এ বিষয়ে যাতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখা চায়। সঠিক ব্যাখা পেলেই কেবল সেই প্রকল্প সংশোধনীর সুপাারিশ করা যেতে পারে। এই প্রকল্পের বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হবে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহর ও দেশের অন্যান্য স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মুদ্রণ শিল্প কারখানাগুলো একটি সুবিধাজনক পরিবেশবান্ধব জায়গায় স্থানান্তরসহ যাবতীয় সহযোগিতা দেওয়া হবে। বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ২৯৯টি মুদ্রণ শিল্প বিসিক স্থাপনে অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করা ও জিডিপিতে অবদান বৃদ্ধি করা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের মুদ্রণ শিল্প কারখানাগুলোর একটি বড় অংশ পুরানো ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। জিডিপিতে অবদান রাখাসহ এসব শিল্প কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করছে। আবাসিক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব শিল্পগুলো বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ করছে। এসব মুদ্রণ শিল্পগুলো পরিবেশ সম্মতস্থানে স্থানান্তরের জন্য বিসিক সম্ভাব্যতা যাচাই করে বিসিক মুদ্রণ শিল্প নগরী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন পায়। সে সময় মোট ১৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। এরপর শিল্প মন্ত্রণালয় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে করে। পরবর্তী সময়ে করোনা পরিস্থিতে একনেকে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে করা হয়। এরপর পরিকল্পনা কমিশন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে করা হয়।
বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয় কিছু নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্প ব্যয় ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এতে মেট ব্যয় দাঁড়াবে ২৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পের জন্য নতুন স্থান নির্বাচন, জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া নতুন স্থানে চিহ্নিত জমির বর্ধিত মূল্যের সংস্থান, পরিবর্তিত ১০০ একর জমির পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, পিডব্লিউ রেট সিডিউল ১৮ অনুযায়ী পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলনের জন্য সংশোধিত ডিপিপির ব্যয় প্রাক্কলন এবং অত্যাবশ্যকীয় নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধি, প্রকল্পের লে-আউট প্ল্যান সংশোধন এবং আইবিএএস সফটওয়ারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিত জনবলের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য খাতের অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তন করা হবে।
প্রকল্পের মূল কাজ হচ্ছে- ৫০ একর ভুমি অধিগ্রহণ, ৮ দশমিক ৪ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩৭৫ বর্গমিটার অফিস ভবন, ৯৩ বর্গমিটার পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার নির্মাণ, একটি গেইট নির্মাণ, ১ হাজার ৮৬৪ মিটার শিল্প পার্কের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৪৫ হাজার ৬৭৩ বর্গমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৯ হাজার ৪৭৫ মিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ২৮টি কালভার্ট, ১৬০ দশমিক ৫৩ মিটার পুকুরে প্যালাসাইটিং, একটি গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ৫ হাজার ৩৫০ মিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম