খোলাবাজারে দাম ছাড়াল ১১৯ টাকা, তবুও ডলার সংকট
১০ আগস্ট ২০২২ ১৯:২৬
ঢাকা: লাফিয়ে লাফিয়ে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে ডলারের দাম। বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে কঠোর নজরদারি, পুলিশের অব্যাহত অভিযানও দাম নিয়ন্ত্রণে কাজে আসছে না। এমনকি কারসাজির অভিযোগ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ডলারের দাম।
সর্বশেষ বুধবার (১০ আগস্ট) কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১১৯ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ ডলারের দাম। এর আগে, গত সোমবার ৮ আগস্ট কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছিল ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা। বুধবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এদিন কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৯ টাকায়।
এদিকে, বাড়তি দামেও ডলার মিলছে না। চতুর্থদিকে ডলারের জন্য হাহাকার অবস্থা। ডলারের কারসাজি রোধে খোলাবাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সোমবার কারসাজির অভিযোগ ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারণের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া, লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় নয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। তারপরেও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
এদিকে, বুধবার কার্ব মার্কেটের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও প্রতি ডলার ১১৪ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও গ্রাহকরা ডলার কিনতে পারছেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। বুধবার (১০ আগস্ট) মতিঝিল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, বিজয়নগর এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ডলারের দাম বাড়া প্রসঙ্গে রেইনবো মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ডলারের দাম বাড়ছে। শুধু দিনে নয়, বলা চলে সকাল-বিকাল ডলারের দাম বাড়ছে। খোলাবাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ডলার কিনে রেখে দিলেই লাভ, এমন আশায় অনেকেই ডলার মজুদ করছে। এসব কারণে ডলারের দাম বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ সকালে প্রতি ডলার ১১৬ টাকা বিক্রি করলেও বিকেলে তা বিক্রি করতে হয়েছে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা। তবে কেউ নাকি ১১৯ টাকা ১২০ টাকাও ডলার বিক্রি করেছে, তারপরেও ডলার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে ডলার নেই। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান না চালিয়ে যারা ডলার মজুদ করছেন সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির কারণে গত রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৫ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। চলতি বছরের মে মাসের শুরুর দিকে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এ সময় মুদ্রাবাজার অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। ২০২১ সালের শেষের দিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে কমতে শুরু করে টাকার মান। ২০২১ সালের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো এক ডলার ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ৮৬ টাকা, গত ২৭ এপ্রিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা, গত ১০ মে ৮৬ ডাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ বুধবার প্রতি ডলার ছুঁয়েছে ১১৯ টাকা।
জিএস/পিটিএম/পিটিএম