ঢাকা: আর্থিক খাতের দুর্বলতার কারণে অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় একটি উত্তরণকালীন নীতি সমঝোতার খসড়া’ শীর্ষক এক আলাপচারিতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে দরিদ্র সরকার গত ১০ বছরে নিজের আর্থিক সংস্থান নিশ্চিত করেনি, যার অনিবার্য পরিণতি ভোগ করছে দেশ। যে কারণেই অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ২০২৪ শেষ হওয়ার আগে এই দুর্যোগ কাটবে না। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বর্তমান রোগের একটি উপসর্গ মাত্র। আসল রোগ হলো বাংলাদেশের আর্থিক খাতের যথাযথ সংস্কার হয়নি।’
সরকারের এই মুহূর্তে তিনটি বিষয় করণীয় আছে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকারকে প্রথমত, সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে উৎসাহ দেওয়া এবং তৃতীয়ত, অসুবিধাগ্রস্ত মানুষকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।’
সিপিডির এই সম্মানীয় ফেলো বলেন, ‘ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে শুধু তা দিয়ে পুরো পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে মোকাবিলা করা যাবে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার। বৈশ্বিক পরিস্থিতি সব দেশকে আঘাত করেছে। কিন্তু অনেকেই এই পরিস্থিতি যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারছে। আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, এখন যদি আমাদের কর জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশ থাকত তাহলে বর্তমানের এতো চাপ তৈরি হতো না।’
অনুষ্ঠানে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে অবিবেচনাপ্রসূত বলে আখ্যা দেন এই অর্থনীতিবিদ। ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি অবিবেচনাপ্রসূত ও অনভিপ্রেত। জ্বালানি তেলের দাম এতটা বাড়ানো ঠিক হয়নি। কেবলমাত্র বৈশ্বিক কারণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকার এখন ভালো ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে, খারাপ ভর্তুকি রেখে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকার মূল্য আরও আগে থেকেই কমানো উচিত ছিল। অর্থনীতিতে সবকিছু ধাপে ধাপে করতে হয়। ধাপে ধাপে করা সব ক্ষেত্রেই সত্য। কারণ অর্থনীতি কখনো শক পছন্দ করে না। জ্বালানি তেলের মূল্য এতটা না বাড়িয়ে অন্য জায়গায় যে সম্পদ ছিল সেটা ব্যবহার করা যেত। অনেক দিন ধরে রেখে হঠাৎ করে টাকার মান কমানো কিংবা জ্বালানির মূল্য বাড়ানো অর্থনীতির দুর্বলতা প্রকাশ করে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকার যদি বলে আইএমএফ’র জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে তাহলে সরকার তার নীতির সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আইএমএফকে স্বামী গোপাল মেনে কিছু করা, এটা কোনো সম্মানজনক অবস্থান নয়। তবে যেকোনো ঋণ পেতে কিছু প্রাক পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আইএমএফ যা বলছে, সরকার তাই করেছে- সেটা সম্মানজনক অবস্থান নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুদের হারের ক্যাপ একেবারে তুলে দেওয়া উচিত হবে না।’ ব্যাংক সুদের হারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।