প্রাথমিকের প্রথম ভ্যাকসিন পেল নন্দিনী
১২ আগস্ট ২০২২ ০৯:৫৬
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। এদিন প্রথমেই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে রাজধানীর আবুল বাশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নিধী নন্দিনী কুণ্ডুকে। এরপর একে একে আরও ১৫ জন ভ্যাকসিন নেয়। শিশুদের এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অবসান হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ভ্যাকসিন নিলেও শিশুদের দেওয়া সম্ভব হয়নি তা নিয়ে অভিভাবকরা, মায়েরা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এখন সেই দুশ্চিন্তার অবসান হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা যেখানেই গিয়েছি সবাই জানতে চেয়েছে, শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে কবে? আমরা ভ্যাকসিন পেয়েছি, কিন্তু আমাদের শিশুদের জন্য পায়নি। অভিভাবকরা এ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। আজকে আমরা শিশুদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। আজকে পরীক্ষামূলক শুরু করতে যাচ্ছি এবং আগামী ২৫ আগস্ট থেকে পুরোদমে ভ্যাকসিন কার্যক্রম দেশব্যাপী চলবে। প্রথমে আমাদের সিটি করপোরেশন এলাকায় শুরু হবে, তারপর পর্যায়ক্রমে সারাদেশে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে এখন পর্যন্ত মোট ভ্যাকসিন এসেছে ৩১ কোটি নয় লাখ। আর প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১২ কোটি ৫৭ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ৭৬ শতাংশ। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন প্রায় ১২ কোটি মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার ৭১ শতাংশ। এছাড়া বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ২৪ শতাংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ফাইজারের ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পেয়েছি প্রায় ৬ কোটি, মডার্না পেয়েছি সাড়ে ৫ কোটি, জনসন অ্যান্ড জনসন পেয়েছি ৬ লাখ। শিশুদের দিতে হলে আমাদের ৪ কোটি ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ৩০ লাখ ভ্যাকসিন আমরা পেয়ে গেছি, বাকি ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতিও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে চলে আসবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে। ফাইজারের ভ্যাকসিন বিশেষ করে শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি খুবই নিরাপদ ও ভালো।’
দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদানের সফলতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সফলভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি ও টিকাদানে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছি। দেশে-বিদেশে সবাই আমাদের প্রশংসা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একদিনে ৮৫ লাখ ভ্যাকসিন দিয়েছি, আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। বিশ্ব এখন জানে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে ভ্যাকসিন দিতে পারে। অনেক দেশ আছে যারা ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দিচ্ছে না, কিন্তু আমরা দিচ্ছি। ভ্যাকসিনের জন্য আমাদের কোনো সময় টাকার অভাব হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ভ্যাকসিনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, ব্লুমবার্গ আমাদের প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে আমেরিকার সরকার প্রশংসা করেছে। তারা এটাও বলেছে, বাংলাদেশকে বিশ্বে গ্লোবাল লিড নেওয়া উচিত ভ্যাকসিন দান কার্যক্রমের বিষয়ে, করোনা নিয়ন্ত্রণে এবং এই বিষয়ে ওনারা সাহায্য করবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘দেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের ৯৮ শতাংশ প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আর ২য় ডোজের ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। টিকায় বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে এবং সারাবিশ্ব প্রশংসা করছে। তাই শিশুরা যাতে নিশ্চিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন এবং শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।’
শিশুদের মধ্যে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া শেষে নিধি নন্দিনী কুণ্ডু বলেন, ‘টিকা নিতে আমার কোনো ভয় এবং ব্যথা লাগেনি। করোনা ভ্যাকসিন নিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার খুরশিদ আলম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাজেন্দ্র বোহরা, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েটসহ অন্যান্যরা।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস
করোনাভাইরাস নিধী নন্দিনী কুণ্ডু স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক