Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাওনা টাকা চাওয়ায় ‘মহাপ্রতারকের’ হুমকি

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ আগস্ট ২০২২ ১৫:২০

ঢাকা: সলিম সরদার। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার পালং উপজেলার বড় বিনোদপুর কাজী কান্দি সরদার বাড়ি। পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন তিনি। রাজধানীর আজিমপুরে বাসাবাড়ির অলি গলিতে ফার্নিচারের ব্যবসা করতেন তিনি। ভালোই চলছিল তার সংসার। গ্রামের পাশের বাড়ির এনামুল সরদার থাকত স্পেনে। এলাকার কাউকে কখনও স্ত্রী, কখনও ছেলে বানিয়ে স্পেনে নিতেন।

হঠাৎ একদিন সলিম সরদারকে স্বপ্ন দেখান এনামুল সরদার। তাকেও স্পেনে নিয়ে যাবে। শুধু একা নয়, পুরো পরিবার সদস্যরা যেতে পারবেন বলে জানান। এতে খরচ হবে ১২ লাখ টাকা। পরে ১০ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। প্রতিশ্রুতি মতে ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারি সাত লাখ টাকা এবং ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিন লাখ টাকা নেন এনামুল সরদার। টাকা নেওয়ার সময় ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত হয়।

বিজ্ঞাপন

টাকা নেওয়ার পর এনামুল সরদার আর যোগাযোগ করেন না সলিমের সঙ্গে। স্পেন যাওয়া দূরের কথা তার কষ্টের টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। নিরুপায় হয়ে সলিম আদালতে প্রতারণার মামলা করেন। আদালত মামলা তদন্তের জন্য লালবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

অভিযোগ উঠেছে লালবাগ থানার এসআই নুর ইসলাম সব ডকুমেন্টস ও সাক্ষীদের লিখিত সাক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও আসামিকে নির্দোষ প্রমাণ করে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেন। বাদী সলিম সরদার আদালতে নারাজি দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্য আবেদন করেন।

আদালত জুডিসিয়ারি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। জুডিসিয়ারি তদন্তে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। ফলে এনামুল সরদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানার পর এনামুল দুইবছর পালিয়ে থাকেন। এরপর আদালতে এসে জামিন নেন। মামলা তদন্তের জন্য সিআইডিতে পাঠানোর আবেদন করেন। পরবর্তীতে সিআইডি তার পক্ষে প্রতিবেদন দেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সলিম সরদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘জুডিসিয়ারি তদন্তের পর এনামুল সরদার কিভাবে আদালতে এসে জামিন নেন। কিভাবে সেই তদন্তের পর পুনরায় সিআইডির কাছে মামলার পাঠানোর জন্য আসামি আবেদন করে সেটিই প্রশ্ন। এ জন্য সুষ্ঠু বিচার চেয়ে তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে আবেদন করেন।’

সলিম সরদার বলেন, ‘এনামুল সরদার আমার চাচাতো বোনের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। ভাগ্নিকেও স্পেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। সেই সুবাদে তাকে কক্সবাজারে নিয়ে হোটেলে ওঠে। সেখানে ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে। ঢাকায় ফিরে এসে ভাগ্নি ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হন লালবাগ থানার সেই এসআই নুর ইসলাম। নুর ইসলাম এই মামলাতেও আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেন। আদালত সেই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে যাবতীয় তথ্যাদি চায়। যাবতীয় কাগজপত্র পেয়ে আদালত তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে বলে। পরবর্তীতে আমার ভাগ্নিকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেন এনামুল সরদার।’

এ বিষয়ে জানতে লালবাগ থানার এসআই নুর ইসলামের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আদালতের নির্দেশনামতে আমার ভাগ্নিকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে কাবিননামা করে এনামুল সরদার। স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার পর ভাগ্নির সঙ্গে আপসনামা করে যার যার মতো আলাদা হয়ে যায়। এখন ভাগ্নির সঙ্গে এনামুলের আর কোনো সম্পর্ক নেই।’

সলিম সরদার বলেন, ‘এনামুল যখন দেখলেন আর কোনো বাঁচার উপায় নেই। তখন তিনি শরীয়তপুরের পালং থানায় আমার বিরুদ্ধে মারামারির মিথ্যা মামলা দেন। মামলার সাক্ষীরা কোনো তথ্য দেয়নি, এমনকি ডাক্তারি কোনো সার্টিফিকেট না দিলেও সেই মামলায় সাজা হয়েছে। এরপরও আমি লড়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘গত ৮ আগস্ট আমার পাওনা টাকা দেবে বলে সালিশ বৈঠক ডাকে এনামুল সরদার। সালিশে আমাকে সব মামলা উঠিয়ে নিতে বলে। আমি পাওনা টাকা দিতে বললে সালিশ বৈঠক ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে ১২ আগস্ট নতুন করে মারামারির মিথ্যা মামলা করে। এখন টাকা চাইলে আমাকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন এনামুল। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। সে একজন মহাপ্রতারক। আমি তার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জানতে এনামুল সরদারের দুটি মোবাইল নাম্বারে কল করা হলে তার দুটি ফোনই ব্যবহৃত হচ্ছে না এমনটি শোনা যায়।

এরপর তার মেজোভাই ইলিয়াস সরদারকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এনামুল হচ্ছে খুবই খারাপ। আমরা ৮ ভাই দুই বোন হলেও তার সঙ্গে কারও কোনো সম্পর্ক নেই। এনামুল একজন মামলাবাজ ব্যক্তি। শুনেছি স্পেনে নেওয়ার নাম করে বহু মানুষের টাকা মেরে দিয়েছে। এ সব নিয়ে অনেকে মামলাও করেছে। এর আগে ইউনিয়ন সচিবকে পিস্তল ধরেছিল। সেই অস্ত্র মামলাতেও তিনি খালাস পেয়েছেন। সে একজন মহাপ্রতারক। তার প্রমাণ স্পেন সরকার তাকে প্রতারক সাব্যস্ত করে ওই দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। সে আর কোনোদিন স্পেনে যেতে পারবে না।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

আদালত প্রতারণা প্রতারণার মামলা সলিম সরদার

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর