কেন্দুয়ার খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়: হাইকোর্ট
১৪ আগস্ট ২০২২ ২১:৫৭
ঢাকা: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল মৌজার ঐতিহাসিক খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ কাজের ওপর তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
সেইসঙ্গে খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কেন ঐতিহাসিক বলাইশিমুল মাঠটিকে মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। পাশাপাশি এ বিষয়ে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার (১৪ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল মৌজার ‘খেলার মাঠ’ হিসেবে চিহ্নিত ১.৮০ একর ভূমি হতে ০.৪৬ একর ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আশ্রয়ন প্রকল্প করার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় এলাকাবাসী খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন না করার দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করে।
এরপর এলাকাবাসীর আবেদন উপেক্ষা করে খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলমান রাখলে এলাকাবাসী গত ৩০ মে কেন্দুয়া সহকারী জজ আদালতে উল্লিখিত ভূমিতে এলাকাবাসীর বর্ত্ত্বস্বত্ত্ব ঘোষণা ও খেলার মাঠ হিসেবে চিহ্নিত শ্রেণি পরিবর্তনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দাবিতে একটি মামলা (নম্বর ১০৯/২০২২) দায়ের করে। এরপর এ মামলায় গ্রামবাসীর নিষেধাজ্ঞার আবেদন গত ৫ জুন সহকারী জজ আদালত নামঞ্জুর করেন।
পরবর্তী সময়ে এই আদেশে সংঘুব্ধ হয়ে এলাকাবাসী মিস আপিল (নং ৩৬/২০২২) দায়ের করলে গত ১৮ জুলাই জেলা জজ আদালত ৫ জুন তারিখে প্রদান করা সহকারী জজ আদালতের আদেশ বহাল রেখে রায় প্রদান করেন। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী বেলার কাছে আইনি সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করলে জনস্বার্থে বেলা রিট (পিটিশন নং- ৯৫০১/২০২২) দায়ের করে।
রিটে ভূমি সচিব, বন ও পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদফতরের মহাপরিচালক, আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক, নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক, জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), জেলার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, নেত্রকোনার পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক, কেন্দুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কেন্দুয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), কেন্দুয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান, কেন্দুয়ার ৮ নম্বর বলাইশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।
বেলার রিটের প্রাথমিক শুনানিকালে হাইকোর্ট ডেপুটি এটর্নি জেনারেলকে এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরতে নির্দেশ দেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত ৩৬টি ঘরের পরিবর্তে কেবল মাত্র ১২টি নির্মিতব্য ঘরই এ মাঠে থাকবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন নিম্ন আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন ক্ষমতার অপব্যবহার। আজ দুপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণে নিষেধাজ্ঞাসহ রুল জারি করেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম