ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের একটি গার্ডারের চাপায় প্রাইভেটকারে থাকা দুই শিশুসহ নিহত পাঁচজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৫টায় তিনটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুর্ঘটনায় আহত হৃদয় সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাবার মরদেহ আমরা বুঝে পেয়েছি। এখান থেকে মরদেহ নিয়ে প্রথমে মানিকগঞ্জের সিংগাইর যাব। সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে মেহেরপুরে নিজ গ্রামে দাদা-দাদির কবরের পাশে দাফন করা হবে।’
একই দুর্ঘটনায় নিহত ঝর্ণা আক্তারের ভাই মনির হোসেন বলেন, ‘আমার দুই বোন ও এক ভাগ্নি-ভাগ্নের মরদেহ বুঝে পেয়েছি। মরদেহ চারটিকে তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরে জানাজার শেষে দাফন করা হবে।’
এর আগে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়ার সময় শুরু হয় নতুন জটিলতা। একে একে পাঁচজন নারী ও তাদের স্বজনেরা আসেন মর্গের সামনে। এ সময় জটলার সৃষ্টি হয়। তাদের প্রত্যেকের দাবি, রুবেল হাসান তাদের স্বামী। প্রত্যেকের ঘরেই আছে সন্তান-সন্ততি। আবার তারা প্রত্যেকেই নিজেকে বাদে অন্য কাউকে রুবেলের স্ত্রী বা স্বজন বলে মানছেন না।’
পরে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মোহসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেকেই অনেক কিছু বলতে পারে, দাবি নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু আমাদের তো আর তা ভেবে বসে থাকলে হবে না। ইতোমধ্যেই মৃত রুবেলের ভাইয়ের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তার লাশ মেহেরপুরে দাফন করা হবে।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. নাশেদ জামিল বলেন, ‘উত্তরার ঘটনায় মরদেহগুলোর যথাযথ প্রক্রিয়ায় ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। মরদেহ থেকে সায়েন্টিফিক্যালি নমুনা সংগ্রহ করেছি।’ তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেতে কতদিন সময় লাগবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
এর আগে, সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে থাকা আড়ংয়ের সামনে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্থাপনা প্রকল্পের একটি গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে পাঁচ আরোহী নিহত হন। আহত হন ওই গাড়িতে থাকা আরও দুই জন। গার্ডারের নিচে প্রাইভেটকার চাপা থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি স্থানীয়দের পক্ষে। পরে এক্সেভেটর দিয়ে গার্ডার সরিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
দুর্ঘটনার শিকার প্রাইভেটকারে ছিলেন একই পরিবারের সাত সদস্য। এর মাঝে নিহতরা হলেন- রুবেল (৬০), ফাহিমা (৪০), ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। তারা আজ ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়। হৃদয় ও রিয়া মনি গাড়িতে থাকলেও সেখান থেকে উদ্ধার করে তাদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।