‘আমেরিকা খুনিদের আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে’
১৬ আগস্ট ২০২২ ২২:৪৪
ঢাকা: ১৫ আগস্টের খুনিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আমেরিকার দিকে আঙুল তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেসব দেশ আমাদের মানবাধিকারের প্রশ্ন তোলে, স্যাংশন দেয়, তারা তো খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবসের স্মরণ সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি। আন্দোল হয়। আর এ জন্য খালেদা জিয়া বাধ্য হয় পদত্যাগ করতে। ৩০ মার্চ তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর জুনে নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সরকার গঠন করতে পেরেছিলাম বলেই ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করতে সক্ষম হয়েছি।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সেটা বাতিল এত সহজ ছিল না। তখন অনেক বাধা। আপানারাই খোঁজ করে দেখবেন, সেদিন কারা এই খুনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কোন কোন আইনজীবী। সেটা একটু খোঁজ করে দেখবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেদিন বিচারের রায় হবে, সেটা ছিল ৮ নভেম্বর। হরতাল ডেকেছিল বিএনপি। কেন? খুনিদের বাঁচাতে। যাতে জর্জ সাহেব কোর্টে যেতে না পারে। বিচারের রায় না দিতে না পারে। কিন্তু জর্জ সাহেব গোলাম রসুল সাহেব তিনি সাহসী ছিলেন। তিনি গিয়েছিলে এবং বিচারের রায়ে খুনিদের ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন।’
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ২০০১ সালে যখন আসে সব বিচার কাজ বন্ধ করে দেয় দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর আবার যখন যখন আমরা সরকারে এলাম ২০০৯ সালে, তখন বিচার কাজ শুরু করি। হাইকোর্টে আমরা আপিল করি। কত বিচারক। বিচারকদের তালিকায় লেখা আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক। আর কোর্টে গেলে তারা বিব্রত বোধ করেন। কেন এই বিচারের রায় তারা দিতে পারবেন না।’
তাই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযুক্তদের বিচারের রায় প্রদানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তার রায়েই এই খুনিদের ফাঁসি হয়। যেটা আমরা কার্যকর করতে সক্ষম হয়েছি।’
আমেরিকা-কানাডা খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনি রাশেদ ছিল কমান্ডিং অফিসার। যে মিন্টো রোডে যে অপারেশন হয় সেই অপারেশনের কমান্ডিং অফিসার ছিল। রাশেদ, শাহরিয়ার মাজেদের নেতৃত্বে সেখানে যায়। মাজেদকে আমরা আনতে পেরেছি। কিন্তু রাশেদের ব্যাপারে বার বার আমেরিকার সাথে কথা বলছি। এখনো তাকে তারা দিচ্ছে না। তাকে তারা লালন-পালন করে রেখে দিচ্ছে। আর নূর কানাডায়। এদের কাছ থেকে আমাদের মানবতার ছবক নিতে হয়। তারা আমাদের মানবতার ছবক শিখায়।’
১৫ আগস্টের পলাতক খুনিদের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘রশিদ লিবিয়াতে পড়ে থাকে, মাঝে মাঝে পাকিস্তানে যায়। ডালিমের খোঁজ পাকিস্তানের লাহোরে আছে এইটুকু জানি। কিন্তু খুব বেশি খবর পাওয়া যাচ্ছে না। মোসলেম উদ্দিন ইন্ডিয়ার আসামের কোনো অঞ্চলে ছিল। বহু চেষ্টা করেছি, তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরা নাম পাল্টে রয়ে গেছে। তবু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই কয়েকজনকে আমরা আনতে পারিনি এখনো। বাকি সব খুনিদের একে একে আমরা নিয়ে এসেছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘থাইল্যান্ডে হুদা আটকা পড়েছিল। থাইল্যান্ডের রাজাকে আমি মেসেজ দিয়েছিলাম। তখনকার প্রাইম মিনিস্টার আমাদের সহযোগিতা করেছিল। তাকে আমরা ফেরত এনেছিলাম। মহিউদ্দিনকে আমরা ফেরত আনতে পেরেছিলাম। আর ফারুক তো ছিলই। যে কয়জন ছিল রায় কার্যকর করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, আমাদের মানবাধিকার কোথায়? তার কী জবাব আমরা পাব। যারা খুনিদের লালন-পালন করল, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, তারাই খুনি বা কোনো না কোনো জঙ্গি সন্ত্রাসীদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত। বিএনপিই তো এদের মদদদাতা। বিএনপি তাদের লালন-পালনকারী।’
সভার শুরুতে ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাটি সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তৃতা করেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম