রংপুরে দাফনের ৫ মাস ১১ দিন পর স্কুল শিক্ষকের লাশ উত্তোলন
১৬ আগস্ট ২০২২ ২৩:৫৩
রংপুর: রংপুরের পীরগঞ্জের দাড়িকাপাড়ায় দাফনের ৫ মাস ১১ দিন পর কবর থেকে তোলা হলো দারিকাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের লাশ। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে সিআইডি লাশটি তোলে।
গত ৫ মার্চ আব্দুল্লাহ আল নোমানের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুত্বর আহত হয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিনই মারা যান মাহবুবুর রহমান। বিষয়টিকে নিছক সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পুলিশ লাশ দাফন করতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
পরিবারের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটানো হয়। এতে পুলিশেরও একটি নেতিবাচক ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ পরিবারের। পরে নিহত মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী নাজমুন নাহার বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলে, আদালত বিষয়টিকে তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডি ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার দুপুরে লাশটি তুলে রংপুর মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়েছে।
নিহতের স্ত্রী নাজমুন নাহার বলেন, ‘জমি নিয়ে শত্রুতার জেরে রফিকুল ইসলামের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমার স্বামীকে সুপরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা দেন। এতে আমার স্বামীর অণ্ডকোষ ফেটে যায়। অথচ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহিম উদ্দিন কাকন কোনো চিকিৎসা না করেই হাসপাতালে তাকে ফেলে রাখেন। আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেও আমাদের বাধা দেন ওই চিকিৎসক। আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে অবহেলা ও উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবেই আমার স্বামী মারা যান। পীরগঞ্জ থানা কর্তৃপক্ষও ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে না পাঠিয়ে লাশ দাফনের নির্দেশ দেন।’
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশেরও অপেশাদার ও নেতিবাচক ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ করেন নাজমুন নাহার।
নিহতের ছেলে মেহেদি হাসান নিরব বলেন, ‘আমার বাবার সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল রফিকুলের। এ নিয়ে রফিকুল আমার বাবার নামে মামলা পর্যন্ত করেছেন। আমার বাবা যদি কোন অপরাধ করে থাকতেন তাহলে আদালত তার বিচার করতো। কিন্তু রফিকুল বিরোধের জেরে পরিকল্পিত ভাবে আমার বাবাকে হত্যা করল।’ এ সময় বাবার হত্যা বিচার দাবি করেন নিহতের সন্তান।
তবে বিষয়টি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কোনো কিছু বলবেন না বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির উপ-পরিদর্শক গোলাম মাওলা রাব্বী।
তিনি বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম, চিকিৎসক ফাহিম উদ্দিন কাকনসহ চার জনকে আসামি করে বাদী সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করলে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। যেহেতু বাদীর স্বামীর লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। লাশ রংপুর মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পীরগঞ্জের এসিল্যান্ড মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী লাশ উত্তোলন করে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ল্যাবের রিপোর্ট পেলে আমরা আদালতকে অবগত করব।’
স্থানীয়রা জানায়, নিহত মাহবুবুর রহমান এলাকায় খুব জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্বজন ও এলাকাবাসী।
সারাবাংলা/পিটিএম