ঢাকাগামী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় কাটেনি
১৭ আগস্ট ২০২২ ০৮:৩২
রাজশাহী: গাজীপুরের ধীরাশ্রমে দ্রুতযান এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে। দুর্ঘটনাস্থলের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পেরোলেও অসহনীয় শিডিউল বিপর্যয় চলছে পশ্চিমাঞ্চলে চলা ট্রেনে।
রাজশাহী-ঢাকা রুটের প্রতিটি ট্রেন চলছে কয়েক ঘণ্টার বিলম্বের বোঝা মাথায় নিয়ে। মাত্রাতিরিক্ত ট্রেনের বিলম্বে গতি হারিয়েছেন যাত্রীরা। অফিস কিংবা ব্যক্তিগত কাজে সময়মতো যাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার (১৪ আগস্ট) রাত ১১টায় ছেড়ে আসা পদ্মা এক্সপ্রেস রাজশাহীতে এসে পৌঁছায় পরদিন সোমবার (১৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায়। এর এদিন রাত সাড়ে ৯টায় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায় রাত সাড়ে চারটার দিকে। এরপর ট্রেনটি ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে আবার কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসে। প্রায় আট ঘণ্টা বিলম্ব হয় ট্রেনটির।
একই অবস্থা ছিল ধুমকেতু এক্সপ্রেসের। গত সোমবার সকাল ৬টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা ধুমকেতু ট্রেনটি রাজশাহীতে এসে পৌঁছায় রাত দুইটায়। রাত সাড়ে তিনটায় রাজশাহী থেকে ছেড়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল পৌনে ১০টা কমলাপুরে পৌঁছায়। ঘণ্টাখানেক বিরতি দিয়ে আবার ট্রেনটি ছেড়ে আসে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বনলতা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের। গত সোমবার রাজশাহী থেকে সকাল সাতটায় ছেড়ে গেলে কমলাপুরে পৌঁছায় রাত রাত দুইটার দিকে। এর কিছুক্ষণ পর ছেড়ে এসে রাজশাহীতে পৌঁছায় সকাল ৮টার দিকে। এরপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ চলে যায়। সেখান থেকে ট্রেনটি রাজশাহী আসে বেলা ১১টায়। এরপর ট্রেনটি আবার ছেড়ে যায়। বিকাল ৪টার দিকে কমলাপুর পৌঁছায়। সেখান থেকে ট্রেনটি আবার ছেড়ে আসে। রাত ১০টা পর্যন্ত ট্রেনটি রাজশাহী এসে পৌঁছায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর ১২টা বাজলেও ছেড়ে যায়নি সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। এমনকি স্টেশনের প্লাটফর্মেও দেখা মিলেনি ট্রেনটির। একাধিকবার সময় পরিবর্তন করলেও ট্রেন না ছাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সিল্কসিটির অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আবু রায়হান বলেন, ‘গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে গত সোমবারের ট্রেন যাত্রা স্থগিত করে টাকা ফেরত নিতে বলে। আমি টাকা না ফেরত নিয়ে আজকের টিকিট নেই। কিন্তু ট্রেনটি সময় মতো এখনো আসেনি। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটু পরপর ট্রেনটি ছাড়ার ঘোষণা দিলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ট্রেনের খবর নেই। কখন যে ছাড়বে তারও নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। স্ত্রী সন্তানসহ চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
তাসনীম রহমান নামের এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘পাঁচ ঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা শুরু হলে তা যাত্রীদের জন্য কতটা অসহনীয় পর্যায়ে যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে বয়স্ক বা শিশুদের নিয়ে যারা ভ্রমণ করে তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
ছোট শিশু ও শাশুড়িকে নিয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে ছিলেন মাহফুজা বেগম। তিনি বলেন, ‘সকাল ৭টায় এসে যখন শুনলাম ১১টার দিকে ছাড়বে তখন সবাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে গেলাম। আবার ১১টার আগে এসে বসে আছি, কিন্তু ট্রেনের খবর নেই। ছোট শিশুকে নিয়ে এমন অপেক্ষা অনেক কষ্টের।’
তবে এদিন সোয়া ২টায় ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম বলেন, ‘আমাদের একটু শিডিউল বিপর্যয় চলছে। তবে অন্যান্য রুটের চেয়ে আমাদের রুটে কম। আজকে পদ্মা এক্সপ্রেসের অফ ডে। সেই ব্রেক দিয়ে রাতে ধূমকেতু চালানো হবে। রাত থেকে শিডিউল বিপর্যয় থাকবে না। ধূমকেতু রাইট টাইমে ছেড়ে যাবে।’
বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস প্রসঙ্গে আবদুল করিম জানান, ‘সকালের বনলতা এক্সপ্রেস ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট বিলম্বে ছেড়েছে। আমাদের সব ট্রেনই গন্তব্য পর্যন্ত যাবে। এই শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে গন্তব্য কমানো হয়নি।’
সারাবাংলা/এনএস