রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ছিল না: মীরসরাই ট্রাজেডির তদন্ত প্রতিবেদন
১৭ আগস্ট ২০২২ ১৩:৪৩
ঢাকা: চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রেলওয়ের গঠিত দুই তদন্ত কমিটির একটি তাদের কার্যক্রম শেষ করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলেও একজন সদস্যের স্বাক্ষর বাকি থাকায় এখনো জমা দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, প্রস্তুত হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য রেলওয়ের গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন এবং মাইক্রোবাস চালক গোলাম মোস্তফা নীরুকে দায়ী করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান সাদ্দাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার বিষয়ে তদন্তে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুটি কমিটির মধ্যে একটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়েছে। কমিটির একজন সদস্য ঢাকায় আছেন। তিনি ফিরে স্বাক্ষর করলে সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য রেলের গেটম্যান ও মাইক্রোবাসের চালককে দায়ী করা হয়েছে।’
গেটম্যান সাদ্দাম ঘটনাস্থলে থাকার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি (সাদ্দাম) ঘটনাস্থলে থাকলে তো প্রতিবেদনে দায়ী করা হতো না।’
তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করা দু’জনের মধ্যে মাইক্রোবাসচালক গোলাম মোস্তফা নীরু ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর গেটম্যান সাদ্দাম হোসেন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলীকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়।
পূর্ব রেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আরমান হোসেনকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যের অপর কমিটির কার্যক্রম এখনও চলমান বলে জানিয়েছেন ডিআরএম আবুল কালাম চৌধুরী।
গত ২৯ জুলাই দুপুরে মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে রেললাইনে উঠে পড়া একটি মাইক্রোবাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে ১১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত ছয়জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের মধ্যে দুইজনের পরে মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত ১৩ জনের সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। তাদের সবাই হাটহাজারী উপজেলার চিকনদণ্ডি ইউনিয়নের খন্দকিয়া ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ১১ জন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র। খন্দকিয়া যুগীরহাট এলাকার আরএনজে কোচিং সেন্টারের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চার শিক্ষক পিকনিকের উদ্দেশে মীরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণা এলাকায় গিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার অধীন সীতাকুণ্ড পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাদ্দামকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৩৮ (ক), ৩০৪(ক) ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
দুর্ঘটনার পরপরই রেলওয়ে পুলিশ সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল। মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন বিকেলে সাদ্দামকে আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার সময় মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালকের দায়িত্বে ছিলেন জহিরুল হক খান। দুর্ঘটনার পর তিনি একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেছিলেন- গেটম্যান যদি ঘটনাস্থলে থাকতেন তাহলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত না। তবে গেটম্যান ছিলেন কি না তিনি দুর্ঘটনার সময় খেয়াল করতে পারেননি।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জহিরুল হক খানের বক্তব্য, ‘এখানে অনেক চলাচলের পথ আছে যেগুলো বৈধ নয়। কারণ স্বাভাবিকভাবে ব্যারিয়ার থাকলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না। আর ওখানে কোনো গেটম্যান ছিলো কি না আমি খেয়াল করতে পারিনি। তবে গেটম্যান থাকলে এই ঘটনা ঘটতো না। এছাড়া গেইটে কোন সিগন্যালও ছিলো না। একটা ট্রেন যদি ব্র্যাক করার জন্য সুইস দেয়া হয়, তাহলে সেটি গিয়ে দাঁড়াবে ৪৪০ গজ পর। কিন্তু দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি এতোটা কাছে ছিলো, যার ফলে ব্র্যাক করেও রক্ষা হয়নি। তবে এই দুর্ঘটনার পেছনে অন্যতম ভুল ছিলো মাইক্রোবাসটির চালকেরও।’
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ট্রেনের চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং নিজস্ব তদন্তে দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/আরডি/এএম