‘দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে জিম্মি বাজার ব্যবস্থাপনা’
১৭ আগস্ট ২০২২ ১৭:১৫
ঢাকা: দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনা জিম্মি হয়ে আছে। মূল্যবৃদ্ধির এই দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারের চালিকা শক্তিরাই। সরিষায় ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে? রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন যা হরার তাই হচ্ছে বাংলাদেশে।’
তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক দুরবস্থা—সবকিছুর মূলে হচ্ছে সরকারের দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণেই দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, তাদের দুর্নীতির কারণেই সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দাপটে মধ্য বিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্ররা পিষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকারের দুর্নীতি, টোটাল ফেলিউর, অব্যবস্থাপনার কারণে আজকে এই অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেখানে সরকারের বিনিয়োগ করার প্রয়োজন নেই সরকার সেখানে টাকা দিচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মাসেতু ৩০ হাজার কোটি টাকার উপরে নিয়ে গেল। কিছুদিন আগে দেখেছে যে, এয়ারপোর্টের রাস্তার সমস্যা—এখানে প্রতি কিলোমিটারে ২৩০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ কী অবস্থা? ১০ বছরে এখন পর্যন্ত এই অবস্থায়ই পড়ে আছে। অর্থাৎ এসবের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি।’
এই অবস্থার পরিবর্তনে ‘রাজপথে আন্দোলন’ করার জন্য সংগঠিত হওয়ার তাগিদ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দুর্নীতিবাজ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করি।’
দেশের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারি হিসেবেই গত জুন মাসের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬% যা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও অনেক কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ নানাভাবে ব্যয় কমিয়ে টিকিয়ে থাকার চেষ্টা করছেন। নিজের আয় দিয়ে আর চলতে না পারায় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে অনেকেই ফ্যামিলি বাসা ছেড়ে উঠেছেন মেসে। মানুষ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘কাঁচাবাজার থেকে একটি পরিবারে যা যা কিনতে হয়, তার প্রায় সব কিছুরই দাম আরেক দফা বেড়েছে। এই তালিকায় চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা আছে, তেমনি রয়েছে সবজি, ডিম, মুরগীর দাম। পিছিয়ে নেই মাছ ব্যবসায়ীরাও। এই মূল্য বৃদ্ধি সেসব সীমিত আয়ের মানুষের ওপরে সরাসরি আঘাত, যারা ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে নাকাল।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষ যখন চরম দুরবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে তখন সরকারের মন্ত্রীদের আবোল-তাবোল বক্তব্য কাঁটা ঘা‘য় নুনের ছিটার মতোই মনে হয়। মানুষের দুরবস্থা নিয়ে মন্ত্রীরা তামাশা করছেন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছেঅভাবের তাড়নায় প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বিক্রি করতে খাগড়াছড়ির এক জাটে তুলেছেন মা সোনালি চাকমা। ছয় বছরের সন্তান রামকৃষ্ণ চাকমার বিনিময়ে ১২ হাজার টাকা দাম চেয়েছে তার মা। কী নিদারুণ অভাব আর কষ্টে থাকলে একজন মান সন্তানকে বাজারে বিক্রির জন্য আনতে পারে তাতেই স্পষ্ট বাংলাদেশ নামক ‘বেহেশতের’ বর্তমান হাল চিত্র।’
‘বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপরে নির্যাতন করা হবে না, আন্দোলন দমন করা হবে না’— প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা কখনই উনার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো কথায় বিশ্বাস করি না। এটা একটা কারণে যে, তারা যা বলে তা করে না।
আয়নাঘরে বন্দি ও নেত্র নিউজ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আয়না ঘরে বন্দি বলেন, নেত্র নিউজের প্রতিবেদন বলেন—এসব কথাগুলো আমরা বহু আগে থেকে বলছি। এই যে গুম করে নিয়ে যায়, তারপরে অনেককে গুম করে রাখে, অনেককে মেরে ফেলে, তারপরে অনেককে ছেড়ে দেয়, তারপরে তারা ভয়ে কোনো কথা বলে না—এই বিষয়গুলো আমরা বহুবার বলেছি।’
‘আজকে নেত্র নিউজের প্রতিবেদনটা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এখন আমরা সবাই জানতে পারছি যে ধরনের ঘটনা একটা ঘটেছে। এভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে, ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করে, গুম করেই তো একটা ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। সেই চেষ্টাটাই তারা(সরকার) করছে।’—বলেন বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির মিডিয়া সেলের শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শায়রুল কবির খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজ উদ্দিন নসু, আমিরুজ্জামান শিমুল, চেয়ারপারসন কার্যালয়ের এবিএম আবদুস সাত্তার ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।
বাম জোটের কর্মসূচিতে সমর্থন
বামজোটের আন্দোলন কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি, যে কোনা দলের যে কোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমরা সমর্থন করি সব সময়। দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতির প্রতিবাদে বাম জোট আগামী ২৫ মার্চ সারাদেশে আধা বেলা হরতাল ডেকেছে। সেখানে আমাদের সমর্থন থাকবে।’
সারাবাংলা/এজেড/আইই