চীনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় হু চুনহুয়া
২০ আগস্ট ২০২২ ০৭:৫৭
ঢাকা: চীন সরকার বা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) নেতৃত্ব বাছাইয়ে দীর্ঘদিন ‘সেভেন আপ এইট ডাউন’ নীতি অনুসৃত হয়ে আসছিল। অর্থাৎ, চীনের নেতৃত্বের শীর্ষ প্লাটফর্ম পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির (পিএসসি) কোনো সদস্যের বয়স যদি ৬৮ বছর বা তার বেশি হয়, তাহলে দলীয় কংগ্রেসের সময় তাকে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। তবে যদি পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির কোনো সদস্যের বয়স ৬৭ বছর বা তার কম হয়, তবে তিনি নতুন কমিটিতে ফের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রার্থী হতে পারবেন। ১৯৯০-এর দশকের গোঁড়ার দিক থেকে দলীয় কংগ্রেসের সময় ৬৮ বা তার বেশি বয়সী পিএসসি সদস্যরা বরাবরই অবসর নিয়ে আসছিলেন।
কিন্তু চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুই বারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে থাকার জন্য সংবিধান পরিবর্তন করায় নেতৃত্ব নির্বাচনের এই নীতিটি আর কঠোরভাবে অনুসরণ করছে না দলটি। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট দুইবারের বেশি মেয়াদ দায়িত্ব পালনের পথে হাঁটলেও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ২০২৩ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এ পদে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতা নির্বাচনের সুযোগ এসেছে সিসিপির সামনে।
গত সপ্তাহে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের পার্শ্ববর্তী বেইদাইহে শহরে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) শীর্ষ নেতৃত্ব ফোরামের বাৎসরিক গোপন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবছর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ এবং বর্তমান শীর্ষ নেতারা গোপন এ সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলনে দল ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়।
আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য সামনে না আসলেও চীনের রাজনীতিতে নজর রাখেন এমন বিশ্লেষকদের দাবি—গত বুধবার গোপন সম্মেলনটি শেষ হয়েছে। এবারের গোপন সম্মেলনটিকে দলটির আসন্ন কংগ্রেসে চীনের নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রস্তুতি বলে মনে করা হচ্ছে। শি জিনপিং তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ— প্রধানমন্ত্রী কে হবেন— এ নিয়েই চলছে মূল আলোচনা। জাপানের নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সম্মেলন শেষে চীনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেছেন বর্তমান উপপ্রধানমন্ত্রীদের একজন— হু চুনহুয়া। ৫৯ বছর বয়সী এ নেতার দিকে পর্যবেক্ষকদের পূর্ণ মনোযোগ।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ শাখা ইয়ুথ লিগ। চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হু চুনহুয়া নেতৃত্বের ইনকিউবেটর খ্যাত ইয়ুথ লিগের প্রাক্তন নেতা। তবে ২০১২ সালে শি জিনপিং সিসিপির সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আসার পর ইয়ুথ লিগের কার্যকারিতা হারিয়েছে। অভিযোগ আছে, শি জিনপিং কার্যত ইয়ুথ লিগের কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছেন।
হু চিনহুয়া বর্তমানে চীনের চার ভাইস-প্রিমিয়ারের একজন। এছাড়া তিনি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরোর সদস্য। দক্ষ প্রশাসক হিসেবে দলের মধ্যে তার খ্যাতি রয়েছে। ছাত্রজীবনেও সফলতার ছাপ রেখেছেন হু। তিনি সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে চীনের মর্যাদাপূর্ণ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগের নেতৃত্ব দেন। কর্মজীবনে তিনি মঙ্গোলিয়া এবং কুয়াংতুং প্রদেশের পার্টি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা এবং তার ৫৯ বছর বয়স হু চুনহুয়াকে চীনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। ২০১২ সালে সিসিপির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শি জিনপিং দলের ইয়ুথ লিগের প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতার অংশ হিসেবে হু-কে নিজের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করে আসছেন। এবার ৫৯ বছর বয়সে আগামী কংগ্রেসে যদি হু দলের অভিজাত পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে পারেন, তাহলে ২০২৭ সালের দলীয় কংগ্রেসে শি জিনপিং-এর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা যেতে পারে তাকে।
ইয়ুথ লিগের আরেক প্রাক্তন নেতা লি কেকিয়াং এবার প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়লেও ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির প্রধান হিসেবে দলের শীর্ষ পদে থাকতে পারেন বলেও বিশ্লেষক মহলে ব্যাপক জল্পনা রয়েছে। লি কেকিয়াং সিসিপির নেতৃত্ব ধরে রাখলে হু চুনহুয়া রাজনৈতিক সুবিধা পেতে পারেন।
সারাবাংলা/আইই