Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতারণা করে কোটি টাকার মালিক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২২ ১৩:৫৩

ঢাকা: বিনিয়ামিন পেশায় ছিলেন উঠতি ব্যবসায়ী। হঠাৎ তিনি নিজেকে পরিচয় দিতে শুরু করেন ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে। ছেলে-মেয়ে কিংবা আপনজনকে আটক করা হয়েছে এমন তথ্য দিয়ে স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।

টাকা লেনদেনের মাধ্যম ছিল মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট। এভাবে গত ১৪ মাসে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন কোটি টাকার বেশি। প্রতারণার টাকায় করেছেন পাঁচতলা বাড়ি, মাছের ঘের করেছেন ১০ বিঘা জমিতে।

বিজ্ঞাপন

ডিবি পুলিশ ওই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, মাদকসহ ধরা পড়েছে আপনার ছেলে’ গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এমন ফোন আসে এক মায়ের কাছে। বলা হয় ৬০ হাজার টাকা দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পেশায় চিকিৎসক মা ছেলেকে বাঁচাতে কোনো যাচাই না করেই পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে ৩০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন।

শুধু এই মা নয়, এভাবে আরও অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রতারকরা। মূলত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের টার্গেট করা হতো। প্রতারণার শিকারদের মধ্যে চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ প্রকৌশলীরাও রয়েছেন।

ছেলে হলে মাদকসহ আটকের কথা বলা হতো, আর মেয়ে হলে বলা হতো- ‘আপনার মেয়ে অসামাজিক কাজে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে, টাকা লাগবে ১ লাখ’।

অভিভাবকরা টাকা পাঠানোর পর প্রতারকরা বলতেন, ‘ঘটনাটি সাংবাদিক ভিডিও করেছে।’ তখন সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার কথা বলে আরও অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন প্রতারকরা।

অভিযোগ পাওয়ার পর ভুয়া এই গোয়েন্দা পুলিশের খোঁজে নেমে সত্যিকার গোয়েন্দাদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। প্রতারকরা এতটাই চালাক যে, তাদের শনাক্ত করেও সেই ঠিকানায় গিয়ে আর পাওয়া যেত না। এমনকি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে পুলিশের গতিবিধিও নজরদারি করতেন প্রতারকরা।

বিজ্ঞাপন

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। ময়মনসিংহ থেকে এক সহযোগীসহ চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- আলামিন ওরফে আমীন ওরফে বিনিয়ামিন ও শরিফুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি, সিসি ক্যামেরার মনিটর, ডিভিআর, নগদ ২০ হাজার টাকা ও ১০০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসিয়েছিলেন বিনিয়ামিন। ফলে অভিযানে গিয়ে পুলিশকে পড়তে হয় বেকায়দায়। গত ১৪ মাসে বিনিয়ামিনের একটি নম্বরে এক কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৯ আগস্ট) রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান সাংবাদিকদের রসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, মোবাইল ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ওপর পুলিশের খুব একটা নজরদারি না থাকায় এর মাধ্যমে প্রতারণা হচ্ছে। আর গ্রেফতার বিনিয়ামিন যে পদ্ধতিতে কাজ করতেন এতে যে কাউকে ফোন করলে সহজেই ঘাবড়ে যাবেন। ফলে চাওয়া মাত্রই টাকা পেয়ে যেত বিনিয়ামিন।

ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, বিনিয়ামিনের একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টে ৮২ লাখ টাকা ও অপর অ্যাকাউন্টে ২৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এসব টাকা দিয়ে বিনিয়ামিন বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের দুইটি বিল্ডিং ও ১০ বিঘা জমির ওপরে মাছের ফিসারিজ রয়েছে।

ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি ব্যক্তিগত নম্বরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য গোপন করার দায় এড়াতে পারে না মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।’

ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে নগদ ও বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করে বিনিয়ামিনকে সরবরাহ করতেন মো. শরিফুল ইসলাম (২০)। সপ্তাহে শুক্রবার ছাড়া ছয়দিনই প্রতারণার কাজ করতেন তারা। এভাবে তারা গড়ে প্রতিদিন দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।

গ্রেফতার বিনিয়ামিনের বিকাশ ও নগদ নম্বর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার একটি বিকাশ নম্বরে ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৭৯৮ টাকা ও নগদের একই নম্বরে ২৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৬০ টাকা লেনদেন হয়েছে। এছাড়া অন্য একটি বিকাশ নম্বরে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৭৩৫ টাকাসহ মোট ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন বিনিয়ামিন।

প্রতারণার কৌশল

মূল টার্গেট ভিআইপি মোবাইল নম্বর। বিনিয়ামিন পুরাতন মোবাইল নম্বরগুলো টার্গেট করতেন। এরপর নম্বরগুলো হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে সার্চ দিয়ে পরিবারের ইতিহাস দেখে নিতেন। এরপর নিজেকে ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে ফোন করে তার ছেলে কিংবা মেয়ে পুলিশের হাতে আটক বলে জানাতেন।

ভিকটিমের ছেলে থাকলে বলতেন, সে ইয়াবা নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে। তাকে ছাড়াতে হলে এখনই বিকাশ কিংবা নগদে এক লাখ টাকা পাঠাতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এই জরিমানা করেছেন। অন্যথায় তাকে কোর্টে চালান দেওয়া হবে।

মেয়ে হলে বলতেন, তার মেয়ে অসামাজিক কাজ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। দ্রুত বিকাশ কিংবা নগদে টাকা না পাঠালে তার মেয়েকে গণধর্ষণ করা হবে। ভিকটিম আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত প্রতারকদের ফাঁদে পা দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। অভিভাবক তখন তার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, মেয়ের মতো অভিনয় করে আম্মু আম্মু বলে চিৎকারের শব্দ শোনাতেন। শুধু তাই নয়, গ্রেফতার বিনিয়ামিন আগ্নেয়াস্ত্রর ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেন।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

টপ নিউজ বিনিয়ামিন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর