সাংবিধানিক কাঠামো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বড় বাধা: সুজন
২০ আগস্ট ২০২২ ১৮:০৩
ঢাকা: দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো নিঃসন্দেহে একটি পর্বতপ্রমাণ বাধা বলে মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন। সংগঠনটি মনে করে সুষ্ঠু নির্বাচনের এই বাধা দূর করতে কমিশনকে এখনই সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলতে হবে, যাতে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে।
শনিবার ( ২০ আগস্ট) এক ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এ ১৭টি সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে। কমিশন প্রস্তাবিত সংশোধনী প্রসঙ্গে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার লক্ষ্যে নাগরিক সংগঠন ‘সুজন’র উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সুজন সহ-সভাপতি বিচারপতি আবদুল মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনটিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজনের সহসম্পাদক জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক, ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, আকবর হোসেন, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচন কমিশনের অতুলনীয় ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের সাংবিধানিক কাঠামোতে নির্বাচন মানেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই যেনতেন প্রকারের বা কারচুপির নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে, নূর হোসেন বনাম নজরুল ইসলাম মামলার রায় আইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন, তবুও এর জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়াটা আত্মঘাতীমূলক হতে পারে। মন্ত্রণালয় কমিশনের পাঠানো প্রস্তাবটি নাকচ করে দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, আরপিও সংশোধনের লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রেরিত নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবনাটি অসম্পূর্ণ। এর একটি কারণ হলো যে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের সংলাপকালে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় না নেওয়ার অভিযোগ। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার ক্ষেত্রে আরও কিছু প্রস্তাব এতে যুক্ত করা প্রয়োজন।’
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন না, নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এছাড়া দেশের বিপুল একটা অংশ দেশের বাইরে থাকেন। তারাও ভোট দিতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী পোস্টাল ব্যালটের বিধান আছে। আমি মনে করি, প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের সুযোগ করে দেওয়া উচিত। আরেকটি বিষয় হলো, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব কমিশনের সাংবিধানিক ম্যান্ডেটের মধ্যে না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে কমিশন এই দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাই স্থানীয় সরকার অনুষ্ঠানের দায়িত্ব কমিশনের ম্যান্ডেটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া উচিত।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সংবিধানের ১১১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট যেটা বলেছেন সেটা ইতোমধ্যেই আইনে পরিণত হয়েছে। তাই কোর্টের রায়ে কমিশনকে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হলেও তা আবার আইন সংশোধন করে সংযুক্ত করতে চাওয়ার উদ্দেশ্য কী- তা প্রশ্নের উদ্রেক করে।’
বিচারপতি আবদুল মতিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে নির্বাচন বাতিলে কমিশনের ইনহেরেন্ট বা অন্তর্নিহিত ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে, তারপরও কমিশনের এই ক্ষমতা আবার চাওয়াটা সন্দেহের উদ্রেক করে বলে আমি মনে করি।’
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম