ঢাকা: অবৈধ উপায়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার যে চেষ্টা বাংলাদেশিদের মধ্যে দেখা যায়, তাতে তাদের মূল লক্ষ্য ইতালি নয়তো গ্রিস। কারণ লিবিয়া পার হতে পারলে এই দুই দেশের নাগাল সহজেই পাওয়া যায়। অবৈধ পথে গিয়ে অনেক বাংলাদেশিই দীর্ঘদিন ধরে গ্রিসে বসবাস করছেন। এমন ১৫ হাজার বাংলাদেশিকে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে গ্রিস সরকার। আসছে সেপ্টেম্বর এই বৈধকরণ কার্যক্রম শুরু হবে।— তথ্যটি জানিয়েছেন গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ।
এথেন্স দূতাবাস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি ‘জনশক্তি রফতানি ও অনিয়মিত বাংলাদেশিদের বৈধতা প্রদান’ বিষয়ে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে যে চুক্তি সই হয়েছে তার আওতায় গ্রিসে অবৈধভাবে বসবাসরত ১৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এথেন্সে বাংলাদেশি দূতাবাসের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে এর বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সেখানে বলা হয়, সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হিসেবে ইতোমধ্যে গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিতকরণের জন্য গ্রিস সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে বাংলাদেশ মিশন। সেখানে প্রাথমিকভাবে নিয়মিতকরণের প্রক্রিয়াটি নির্ধারিত হয়েছে। বলা হয়, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিতকরণের কার্যক্রম শুরু হবে।
এথেন্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ এ সংক্রান্ত এক ব্রিফিংয়ে জানান, বৈধকরণে গ্রিস সরকার একটি অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করবে। যেখানে শুধু অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরা আবেদন করবেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে তাৎক্ষণিকভাবেই বৈধ হয়ে যেতে পারবেন। পাশাপাশি বৈধভাবে চাকরিরও সুযোগ পাবেন। অনলাইনে আবেদন সঠিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরপরই আবেদনকারীর ই-মেইলে তার অস্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট পাঠানো হবে।
তিনি জানান, এই বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ এবং সংক্ষিপ্ত। এতে কোনো জটিলতা না থাকায় বাংলাদেশি কর্মীদের কোনো এজেন্ট বা কোনো উকিলের শরণাপন্ন হওয়ার বাধ্যবাধকতা নাই। তবে কেউ প্রয়োজন মনে করলে দূতাবাসের সহায়তা নিতে পারেন এবং বিশ্বস্ত উকিলের সহায়তা নিয়ে তাদের আবেদন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন। এই আবেদন প্রক্রিয়া তিনটি ধাপে শেষ হবে। প্রথম ধাপে, বৈধ হতে আগ্রহী প্রবাসী বাংলাদেশিরা দূতাবাসে তাদের নাম নিবন্ধন করবেন এবং তাদের পাসপোর্টের একটি অনুলিপি সত্যায়িত করে নিয়ে যাবেন।
দূতাবাসে নাম নিবন্ধনের সময় কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। সেগুলো হলো— দুই বছরের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আগে গ্রিসে আগমন বা বসবাস প্রমাণের দলিল থাকতে হবে। একটি ইমেইল এড্রেস থাকতে হবে। এবং নামে নিবন্ধিত একটি মোবাইল নম্বর থাকতে হবে। যারা এতামধ্যে তাদের সম্ভাব্য চাকরিদাতা নিশ্চিত করতে পেরেছেন তারা শিগগিরই দূতাবাসে এসে তাদের নাম নিবন্ধন করে পাসপোর্টটি সত্যায়িত করে নিয়ে যেতে পারেন।
রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ‘দূতাবাস ইতোমধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে এবং প্রায় শতাধিক আবেদনকারীর নাম নিবন্ধিত করেছে। দূতাবাসে নাম নিবন্ধন করা হলেই শুধুমাত্র আপনি গ্রিক সরকারের ঘোষিত অনলাইন প্লাটফর্মে নিয়মিত হওয়ার জন্য আবেদন করতে সক্ষম হবেন। এই নিবন্ধনকারীদের নাম দূতাবাস অনলাইন প্লাটফর্মে সংযুক্ত করার মাধ্যমে তাদের আবেদনের প্রাথমিক ধাপ শেষ হবে। এরপর গ্রিস সরকার তা যাচাই-বাছাই করে বৈধতা দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়মিতভাবেই অর্থলোভী দালাল চক্র নানাভাবে হয়রানি ও শোষণ করে চলেছে। তাদের গ্রিক মালিকেরাও তাদের বৈধ কাগজপত্রের অভাবে সর্বনিম্ন মজুরির চেয়ে অনেক কম বেতন দিচ্ছে এবং তারা নিয়মিতভাবেই শোষণ আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা গ্রিক সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, একটি সমঝোতা চুক্তি করে আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় যদি তাদের আনা যায় তাহলে তারা যথাযথ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। এবং তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হতে পারবে। এতে করে দুই দেশই সমানভাবে লাভবান হবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে দালালদের দৌরাত্ম কমবে এবং অবৈধ ট্রাফিকিং রোধ হবে।’
উল্লেখ্য, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী দেশটির সেবা খাতে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর চার হাজার বাংলাদেশি কৃষি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকরির ভিসা নিয়ে গ্রিসে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।