Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরম্পরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানাল আ. লীগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ আগস্ট ২০২২ ২১:২৬

ঢাকা: সপরিবারের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা এবং নৃশংস ওই হত্যা মামলার দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার পরম্পরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

শনিবার (২০ আগস্ট) ঐতিহাসিক ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে দলের আন্তর্জাতিক উপকমিটি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘অ্যানালস অব হিস্ট্রি: দ্য ইনডেলিবল মার্ক অব আগস্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাপান, রাশিয়া, জার্মানি, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। পরে কূটনীতিকরা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ঘুরে দেখেন।

আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে দীর্ঘ ২১ বছর বিচার বন্ধ রাখাসহ বিচারপ্রক্রিয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির পর বিচার তো দূরের কথা, মামলা পর্যন্ত করার সুযোগ ছিল না। কোনো অসভ্য দেশেও এ ধরনের আইন থাকতে পারে না।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের পথ উন্মুক্ত করে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার চাইলে সামারি ট্রায়ালের মাধ্যমে ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পারতেন। সেটা হলে ৩/৪ মাসের মধ্যে বিচার শেষ করা সম্ভব হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেটা চাননি। অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো ওই বিচারও সাধারণ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ওই বিচার আবারও বাধাগ্রস্ত হয়। এ সময় সাতজন বিচারপতি বিচার করতে বিব্রতবোধ করেছেন। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আবারও বিচার কাজ শুরু হয় এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালতে আপিল, রিভিউ সব প্রক্রিয়া শেষ করার পর বিচারের রায় কার্যকর করা হয়।

তিনি আরও জানান, কোনো ক্ষোভ বা প্রতিহিংসায় বশীভূত হয়ে সরকার বিচার করেনি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচারের জন্যই এটা করেছে।

বিচার প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে জিয়াউর রহমান ও পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনমন্ত্রী। এ সময় বিদেশি দূতদের উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, এখানে দোষারোপের রাজনীতি করতে আসিনি, আমরা সত্য তুলে ধরতে এসেছি। আপনাদেরও সুযোগ হবে এটা যাচাই করার।

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের সরকার খুঁজছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় বাস্তবায়ন করতে চাই। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরা এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চাই। যেসব দেশে খুনিরা পালিয়ে রয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করি, তাদের (খুনি) বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হোক। প্রতিশোধ নয়, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমরা এটা চাই।

বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা বিচারকার্য সম্পন্ন করেছি। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চাই। কারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল, কারা তাদের মদত দিয়েছে? এটা জাতি জানতে চায়। আমাদের জাতির জন্যও এই সত্য ঘটনা জানা দরকার। এজন্য আমরা কমিশন গঠন করতে চাই। এই কমিশন প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গঠন করা হবে না। ইতিহাসকে ইতিহাসের সঠিক জায়গায় স্থান করে দেওয়ার জন্য এটা গঠন করা হবে। যাতে মানুষ জানতে পারে প্রকৃতপক্ষে ওই সময় কী ঘটেছিল।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে জিয়াউর রহমান আইনি বৈধতা দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, আপনাদের কাছে বিএনপি নেতৃবৃন্দ যান। বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। আপনাদের প্রতি অনুরোধ করবো, আপনাদের কাছে বিএনপি গেলে জিয়াউর রহমান কেন ইনডেমনিটি
অর্ডিন্যান্স পাস করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার থেকে রেহাই দিয়েছিল— সেই প্রশ্নটি করবেন। আজকে বিএনপি নিরীহ মানুষদের পেট্রোল বোমা মেরে মারছে, শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে— এটা কী মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? এই প্রশ্নও বিএনপিকে করবেন এই অনুরোধ করছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর কিছু খুনি এখনো বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। আশা করব, যেসব দেশে পালিয়ে রয়েছে; সেই দেশের সরকার আইনের শাসনের বিষয়টি উপলব্ধি করে ওইসব খুনিদের ফিরিয়ে দেবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতি এম জমির তার বক্তব্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান অ্যাম্বাসেডর এম জমিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানন, আব্দুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ,জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নাহিদ এজহার খান, বঙ্গবন্ধুহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী আব্দুর রহমান শেখ রমাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/এএম

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর