১৫ আগস্টের পর ড. কামাল আমাদের খোঁজও নেননি: শেখ হাসিনা
২১ আগস্ট ২০২২ ১৮:৫৫
ঢাকা: ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পরবর্তীতে কোথায় কী অবস্থায় আছি সে খোঁজটাও কামাল হোসেন নেননি। এরপর ১৯৮০ সালের দিকে রেহেনা তাকে খুঁজে পায় একটা মিষ্টির দোকানে, তিনি (কামাল হোসেন) মিষ্টি কিনছিল তখন রেহেনা তাকে ধরে। তাকে বলে আপনারা থাকতেও একবারও প্রতিবাদ হয়নি কেন? এ রকম চড়াই উৎতরাই পার হয়ে যখন বাংলাদেশে এসেছি। প্রতি পদে পদেই তো বাধা। তারপরেও ক্ষমতায় আসতে পেরেছি, দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পেরেছি।
রোববার (২১ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একুশে আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর একটা কথা বলার মতো অধিকার তারা দেয়নি। মাত্র ১৫ দিন আগে রেহেনা আর আমি দেশ থেকে গেলাম। কিছুতেই যাব না, কারণ ১৫ তারিখে আব্বা ইউনিভার্সিটিতে আসবে। আমি ইউনিভার্সিটি ছাত্রী। এটি আমার জন্য কতটা গৌরবের ছিল। ওয়াজেদ (শেখ হাসিনার স্বামী) সাহেবকে যখন ফোন করে বললাম তিনি ভীষণ রাগ করলেন। তখন আব্বা বললেন ঠিক আছে তুমি চলে যাও। আমার মনটা পড়েছিল এখানেই। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন ১৪ তারিখেও কথা হলো আব্বা-আম্মার সঙ্গে। পরদিন শুনতে পেলাম আমাদের কেউ বেঁচে নেই।’
১৫ আগস্টের ঘটনায় মা-বাবা ভাই আত্মীয় স্বজনদের হারিয়ে দিশেহারা বঙ্গবন্ধু কন্যা সেই সময়ের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা জার্মানিতে ছিলাম। সেখানে সানাউল হক সাহেব আগের দিন রাতে আমাদের ডিনার করালেন। যখন খবর এলো আমার আব্বাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি (সানাউল হক সাহেব) হুমায়ুন রশীদ সাহেবকে ফোন করে বললেন আমার কাছে যে আপদ রেখেন নিয়ে যান। আমরা তার কাছে আপদ ছিলাম। এই ব্যবহারটা তখন করেছেন। তিনি তো ডিপ্লোম্যাট ছিলেন না, তিনি একজন সুশীল মানুষ। তার কাছ থেকে পেলাম আমরা এই ব্যবহার।’
‘হুমায়ূন রশিদ সাহেবের ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট। তাদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক কোনো পরিচয় ছিল না। জার্মানিতে গিয়ে পরিচয় হয়, কিন্তু তিনি আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। সবরকম সহযোগিতা করেছেন। ১৬ তারিখ সকালে কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি গিয়েছিলেন জার্মানির বন শহরে হুমায়ন রশীদ সাহেবের বাসায়। রেহেনা তার হাত চেপে ধরেছিল বলছেন, আপনি একটি প্রতিবাদ করেন। আপনি তো ফরেন মিনিস্টার, তিনি কিন্তু তা করেননি। এমনকি আমরা পরবর্তীতে কোথায় কী অবস্থায় আছি সে খোঁজটাও কামাল হোসেন নেননি। এরপর ১৯৮০ সালের দিকে রেহেনা তাকে খুঁজে পায় একটা মিষ্টির দোকানে, তিনি (কামাল হোসেন) মিষ্টি কিনছিল তখন রেহেনা তাকে ধরে। তাকে বলে আপনারা থাকতেও একবারও প্রতিবাদ হয়নি কেন? এরকম চড়াই উৎতরাই পার হয়ে যখন বাংলাদেশে এসেছি। প্রতি পদে পদেই তো বাধা। তারপরেও ক্ষমতায় আসতে পেরেছি, দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পেরেছি।’
আলোচনা সভার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে শ্রদ্ধা জানান। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে নির্মিত বেদীতে শ্রদ্ধা জানান। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এসময় কিছুটা দুরত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ গ্রেনেড হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত ও দলের নেতাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করেন শেখ হাসিনা।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপের পরিচালনায় স্মরণ সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সারাবাংলা/এনআর/একে