Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দখলদার উচ্ছেদে ‘রণপ্রস্তুতি’, ফলাফল শূন্য

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২২ ২১:৩৮

ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘোষণা দিয়ে ‘ঢাকঢোল পিটিয়ে’ অভিযানে গিয়েও উচ্ছেদ না করে ফিরে এসেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। ব্যাপক প্রস্তুতির পরও উচ্ছেদ না করে কেন ফিরে এল, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সুষ্পষ্ট ব্যাখা পাওয়া যায়নি।

রোববার (২১ আগস্ট) জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে ঘোষিত উচ্ছেদ অভিযান শেষপর্যন্ত প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ডিআইজি আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে পাহাড় কেটে কিভাবে প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করা হয়েছে সেটা আমরা সরেজমিনে দেখেছি। এ জায়গাটা সরকারি খাস জায়গা। যারা এখানে বসবাস করছে বা প্লট করে বিক্রি করেছে পুরোটা অবৈধভাবে করেছে। কিভাবে সরকারি জায়গাগুলো উদ্ধার করা যায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনা করব।’

জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, ‘এটা পুরোটাই সরকারি খাস জায়গা। আপনারা দেখেছেন, সরকারি পাহাড়, টিলা ও গাছপালা কেটে কিভাবে পুরো জায়গাটা ধ্বংস করা হয়েছে। এটি অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য, এখানে দাগি সন্ত্রাসীরা বসবাস করে। এলাকাটা উদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছি। সেপ্টেম্বর থেকে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে সকল অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা হবে।‘

বিজ্ঞাপন

এর আগে, দখল করা খাসজমি ২০ আগস্টের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু রোববার ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, অনেকেই এখনো এলাকা ছাড়েননি। বরং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে যাবার খবর পেয়ে ‘অবৈধ দখলদারেরা’ রাস্তা কেটে দেয়। সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে রাস্তা সংস্কার করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করা হয়।

উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিয়ে প্রায় শ’খানেক গাড়ি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা যান আলীনগর পাহাড়ে। জেলা প্রশাসনের কর্মীদের প্রয়োজনীয় ব্রিফও করা হয়। উচ্ছেদে মহিলারা বাধা দিলে তাদের প্রতিরোধের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তৃতীয় লিঙ্গের বেশ কয়েকজনকে। সাংবাদিকদেরও সঙ্গে নেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু শেষপর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত শুক্রবার তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে মন্ত্রী আলীনগরের জায়গাগুলো সরেজমিনে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার অংশ হিসেবে পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর যে জেনারেটরগুলো থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। কিছু গ্যাস সংযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের সময় এবং যান চলাচলে লাইনগুলোর যাতে সমস্যা না হয় সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।’

কারাগার স্থানান্তরসহ সরকারি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে সরকারি পাহাড় দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বসতি ও স্থাপনা গত ২ জুলাই থেকে উচ্ছেদ শুরু করে জেলা প্রশাসন। তবে প্রথমদিনেই উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসন যাদের অবৈধ দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তারা উচ্ছেদে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন।

সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ী এলাকা জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়ে প্রায় ৩ হাজার ১০০ একর সরকারি খাসজমি আছে। ‘চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন সেই খাসজমি দখল করে প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে পাহাড় কেটে ও জঙ্গল সাফ করে প্লট বিক্রি করে আসছে। নিম্ন আয়ের লোকজন সেই প্লট কিনে সেখানে বসতি ও দোকানপাট গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাও আছে। জেলা প্রশাসন বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সেখান থেকে তাদের সরাতে পারেনি। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী ওই এলাকায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ বসবাস করে।

এ অবস্থায় জেলা প্রশাসন সম্প্রতি সেই খাস জমি দখলমুক্ত করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরির মহাপরিকল্পনা নেয়। গত ১ জুলাই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ পরিদর্শনে গিয়ে নগরীর লালদিঘী এলাকা থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সলিমপুরে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন। সেখানে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র, আর্মি স্টেডিয়াম, হাসপাতাল, পার্কসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনার কথা জানান তথ্যমন্ত্রী।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসক জঙ্গল সলিমপুরে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ‘নাইট সাফারি পার্ক’, স্পোর্টস ভিলেজ, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আইকনিক মসজিদ, ইকো পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা করার পরিকল্পনার কথা জানান।

মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জঙ্গল সলিমপুরে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও একটি র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম জঙ্গল সলিমপুর সীতাকুণ্ড উপজেলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর