‘হাওয়া’র প্রদর্শন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ
২২ আগস্ট ২০২২ ১৬:৪৭
ঢাকা: বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে হাওয়া সিনেমার ছাড়পত্র বাতিল করে বাংলাদেশে ও দেশের বাইরে এর প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২২ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহ. সাইফুল্লাহকে এই নোটিশ দিয়েছেন আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
নোটিশে ভবিষ্যতে কোনো সিনেমার ছাড়পত্র প্রদানের পূর্বে চলচ্চিত্রটিতে যেন ভায়োলেন্স পূর্ণ খুনের দৃশ্য, অশ্লীল গালি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২’র কোনো ধারার লঙ্ঘন না হয় সেই ব্যাপারে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পাওয়া মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমায় ট্রলারে থাকা একটি খাঁচায় শালিক পাখি বন্দী অবস্থায় দেখা যায়। এক পর্যায়ে সেটিকে হত্যা করে খাওয়ার দৃশ্য দেখানো হয়েছে।
‘হাওয়া’ সিনেমার কয়েকটি দৃশ্য রয়েছে, যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত এ ধরনের অপরাধের ফলে সাধারণ মানুষ পাখি শিকার, খাঁচায় পোষা ও হত্যা করে খাওয়ায় উৎসাহিত হবে। এই দৃশ্য ধারণের জন্য বনবিভাগের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বন্যপ্রাণী হত্যা এবং খাওয়ার দৃশ্য দেখে মানুষ মনে করতে পারেন যে, এটা করা যায়। তারা এগুলো দেখে উৎসাহিত হতে পারেন। সিনেমা নাটকে ধূমপানের দৃশ্যে যেমন লেখা থাকে, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্ত ‘হাওয়া’ সিনেমার ওই অংশে এই ধরনের কোনো বার্তা ছিল না। ইতোমধ্যে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চার কর্মকর্তা ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ধারা ৩৮(১), ৩৮(২), ৪০ ও ৪৬ ধারা লঙ্ঘনের সত্যতা পেয়ে গত ১৭ আগস্ট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এছাড়া ‘হাওয়া’ সিনেমায় বেশ কয়েকটি খুনের দৃশ্য রয়েছে, যা অতি ভয়ংকর তথা ভায়োলেন্স পূর্ণ। এছাড়া পুরো ‘হাওয়া’ সিনেমায় নারী চরিত্রকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরার পাশাপাশি অসংখ্য অশ্লীল গালি ব্যবহার করা হয়েছে। যা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশেষ করে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখা মোটেও উচিত নয়। এর মাধ্যমে শিশু-কিশোররা, তরুণ-তরুণীরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অথচ ‘হাওয়া’ সিনেমার কোথাও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখা নিষেধ এই কথাটিও উল্লেখ নাই। এই ধরনের চলচ্চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, বর্হিবিশ্বেও প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন হলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
লিগ্যাল নোটিশে আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার আরও বলেছেন, ‘হাওয়া’ সিনেমাটিতে ভায়োলেন্স পূর্ণ খুনের দৃশ্য, অশ্লীল গালি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর ধারা ৩৮(১), ৩৮(২), ৪০ ও ৪৬ ধারা লঙ্ঘন হলেও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড’র সদস্যরা পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনকে হাওয়া সিনেমার বিতর্কিত দৃশ্যগুলো কর্তন বা আইন লঙ্ঘনের চিত্র সংস্কার করতে না বলে বরং সিনেমাটিকে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ছাড়পত্র দিয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব তৈরিতে উৎসাহ দিয়ে সমান অপরাধ সংঘটিত করেছেন।
সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না পেলে এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম