কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করবে না ইসি
২২ আগস্ট ২০২২ ১৯:৫৬
ঢাকা: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের প্রত্যাশা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে কোনো দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করবে না ইসি; সেরকম কোনো নিয়মও নেই। কিন্তু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে কমিশন সবধরনের উদ্যোগ নেবে।
সোমবার (২২ আগস্ট) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির ১৩ দিনের সংলাপের লিখিত মতামত প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসির মতামতে উল্লিখিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
এর আগে, গত ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। ইসির সংলাপে ৩৯টি দলের মতো ২৬টি অংশ নেয়। এছাড়া দু’টি দল সংলাপে অংশ না নিয়ে নতুন সময় চাইলে তাদের আগামী সেপ্টেম্বরে সময় দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বিএনপিসহ ১১টি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়নি।
ইসির দেওয়া ১০ মতামতের মধ্যে বলা হয়েছে- আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশন সব দলের বিশেষত প্রধানতম রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করে। তবে নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না। সে ধরনের কোনো প্রয়াস ইসি নেবে না।
নির্বাচনের সঠিক ফলাফল নিশ্চিতকরণ, পেশীশক্তি প্রতিরোধ ও রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ প্রসঙ্গে ইসির বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধান, আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে প্রদত্ত সব ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সৃষ্ট সব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগের অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করতে কমিশন সব উদ্যোগ নেবে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার মাধ্যমে কতিপয় মৌলিক প্রশ্নে মতৈক্যে উপনীত হওয়ার কথা বলছে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়, নির্বাচনে জয়-পরাজয় অনিবার্য। প্রার্থীদের জয়-পরাজয় মেনে নিতে হবে। পরাজয় মেনে না নেওয়ার মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। প্রার্থীরা প্রতিটি কেন্দ্রে কর্মী রেখে সক্রিয়ভাবে প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সৃষ্ট ভারসাম্য অর্থশক্তি ও পেশীশক্তির ব্যবহার ও প্রভাব অনেকাংশে প্রতিরোধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠায় তা সহায়ক হবে।
ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত সুপারিশের ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত বিষয়ে বলা হয়, দেশি এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভোট পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া হবে। ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ অবাধ, নির্বিঘ্ন, স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান করতে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সিসি ক্যামেরা প্রতিস্থাপন করে ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ ও সামর্থ্য সাপেক্ষে দেওয়া হবে।
একাধিক দিনে নির্বাচন ও সেনা নিয়োগের বিষয়ে সিইসি বলেছে, একাধিক দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে কি না, হলে তা কীভাবে সম্ভব হবে, ফলাফল দিন শেষে প্রকাশ করা হবে কি না, করা হলে তা পরবর্তীতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে কি না ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় করা হয়েছে। বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শের আশা রাখে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে কমিশন মনে করে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি এবং সমর্থন দুই-ই রয়েছে। কমিশন তা শুনেছে এবং মতবিনিময় করেছে। কমিশন ইভিএম’র সার্বিক বিষয়ে এখনো স্থির কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি।
এদিকে, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, এক মঞ্চে প্রচার ও ঋণ খেলাপের বিষয়ে সিইসি তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘অনলাইনে নমিনেশন পেপার দাখিল/গ্রহণের সুযোগ বা বিধান বর্তমানে আরপিওতে বিদ্যমান রয়েছে। একই মঞ্চ থেকে সবদলের প্রার্থীর বক্তব্য প্রদানের এবং প্রচারণার নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করার, নির্ধারিত স্থানে সব প্রার্থীর পোস্টার লাগানো বা লটকানোর ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে একই পোস্টারে সব প্রার্থীর প্রচারণার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব আধুনিক। এতে নির্বাচনি ব্যয় কমে আসতে পারে।’
নির্বাচনকালীন সরকার সংশ্লিষ্ট সংলাপে আসা সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সিইসি জানায়, ‘নির্বাচন কমিশন মনে করে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত বিষয়টিও সংবিধানের আলোকে বিবেচিত হওয়া প্রয়োজন।’
ক্ষমতাসীন দলের বাধা, মিথ্য মামলার বিষয়ে কমিশন মনে করে, সাধারণ্যে এমন একটি ধারণা বা বিশ্বাস প্রবল। কমিশন দৃঢ়ভাবে আরও বিশ্বাস করতে চায়, সরকারি দল এ ধরনের নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গজনিত কাজ থেকে বিরত থাকবে এবং রাজনৈতিক কারণে কোনো মামলা করে সুস্থ গণতন্ত্র চর্চার পথ রুদ্ধ করবে না।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম