আলুর ক্ষতিপূরণ ও কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া কমানোর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
২৩ আগস্ট ২০২২ ২১:২৯
ঠাকুরগাঁও: পঁচা আলুর ক্ষতিপূরণ ও কোল্ডস্টোরেজ ভাড়া কমানোর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে ঠাকুরগাঁও আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। তবে ঠাকুরগাঁও আলুচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি কৃষকদের জিম্মি করে রেখেছে বলে দাবি করে কোল্ডস্টোরেজ মালিক সমিতি বলছে, এতে কৃষকরা আরও ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এদিকে দুই পক্ষকে নিয়েই একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়ক অবরোধসহ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে ঠাকুরগাঁও আলুচাষী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। এরপর তারা পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় আলুচাষী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা নুরুল হুদা স্বপন, সভাপতি রমজান আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. হাসিবুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দীন, আলু চাষী সুজন আলী, মিলন হোসেন ও ফরিদুল ইসলামসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
আলু চাষী নূরুল হুদা স্বপন বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে মানববন্ধন করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বরাবর স্মারক লিপি দিয়েছিলাম। বিষয়টি সমাধানের জন্য ওই মাসের ৮ তারিখে আমাদের সঙ্গে বসার কথা বলেন ডিসি। কিন্তু দুখের বিষয় তিনি বসলেন না। পরে ১৫ তারিখে বসার কথা বললেন। ১৫ তারিখে গেলে তিনি বলেন কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা ঠাকুরগাঁওয়ে নেই। আমরা বললাম- আপনার তথ্যটা সঠিক নয়, অধিকাংশ মালিকরা ঠাকুরগাঁওয়ে আছেন। পরে ডিসি বলেন, তারা (মালিকরা) ১৫ দিন সময় চেয়েছেন। উনি তাদের ২৯ জুন পর্যন্ত সময় দিলেন। ওই সময় গেলে ডিসি বলেন, জুন মাসের জন্য মহা ব্যস্ত, এখন এগুলো নিয়ে বসতে পারব না। দ্রুত বসব। উনি ২-৩ জুলাইয়ের মধ্যে বসবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ অফিস ছিল ৬ জুলাই। সেদিন মানববন্ধন করে ওনার অফিসে গেলাম। তিনি বললেন, আগামী ৩ থেকে ৪দিনের মধ্যে আমি একটা অ্যাকশনে যাচ্ছি। আপনাদের সঙ্গে আবারও বসব। আমরা বললাম, ভাড়ার সঙ্গে আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। অধিকাংশ কোল্ডস্টোরেজে তিন ভাগের এক ভাগ আলু পঁচে গেছে। ডিসি বলেন, আমরা একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি। কি যে অদৃশ্য কারণ? এই অদৃশ্য কারণটা বুঝার ক্ষমতা সৃষ্টি কর্তা আমাদের দেন নাই। অদৃশ্যের কারণে তিনি আজও আমাদের বিষয়টি আমলে নিলেন না। বার বার কথা দিলেন কথা রাখলেন না। তিনি আমাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা করেছেন।’
কৃষক হাসান আলী বলেন, ‘আমরা কৃষক, কৃষিই আমাদের পেশা। কোল্ডস্টোরেজে আলু রাখছি। মালিকদের খামখেয়ালির কারণে অনেক আলু পঁচে গেছে। আবার ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না। আমাদের দাবি ক্ষতিপূরণ দিবে এবং ভাড়াও কমাবে।’
আলু চাষি ও ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কৃষকের আন্দোলন। কৃষকরা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে অবরোধ কর্মসূচী পালন করেছেন। প্রতিবস্তায় ১০ কেজি আলু পঁচে গেছে। কৃষক প্রতি বস্তা আলু ২৬০ টাকা বিক্রি করতে পারছে না। অথচ ভাড়া দিতে হচ্ছে ২৬০ টাকা।’
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ব্যবসায়ীও আছে এবং কৃষকও আছে। ব্যবসায়ীদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। তবে আমাদের কিছু ব্যবসায়ী বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষ করছেন। সেই আলু তারা সংরক্ষণ করছেন। তারা ব্যবসাও করে আবার কৃষকও। ঠাকুরগাঁও জেলায় আলুর ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে এই মানুষগুলো।’
কোল্ডস্টোরেজ মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ হক বলেন, ‘কতিপয় ব্যক্তি আলুচাষী ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নাম করে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থ করছে। তারা কৃষকদের জিম্মি করে ফেলেছে।’
আলু পঁচার বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর অন্যান্য জেলার কোল্ডস্টোরেজ ভাড়ার মূল্য তালিকা জমা দিয়েছি। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমাদের জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। অন্যান্য জেলার ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।’
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মো. হাবিবুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আলু সংগ্রহকালে প্রচুর আলু অপেক্ষমান থাকায় এবং সে সময় তাপমাত্রা বেশি ছিল। ফলে ওই সময় কিছুটা অনিয়মের কারণে প্রত্যেকটি আলুর কোল্ডস্টোরেজে কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।’
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগের বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘তারা কেন বলেছে তারাই জানে, আমি কিভাবে বলব। আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান। আমাদের দিক থেকে যেটা করণীয়, আমরা সেটা করছি।’
সারাবাংলা/এনএস