সিলেটে চা শ্রমিকদের পক্ষে পঞ্চায়েত প্রধানেরা, দোটানায় নেতারা
২৩ আগস্ট ২০২২ ২১:৫৬
সিলেট: ৩০০ টাকা বেতনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা চা শ্রমিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধানেরা। আর চা শ্রমিক নেতারা এখনো আছেন দোটানায়। যারা কাজে যোগ দিচ্ছেন তাদের পক্ষে আছেন, আবার যারা কাজে যোগ দিচ্ছে না, তাদের পক্ষেও আছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এদিকে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) লাক্কাতোড়া গলফক্লাবে অনুষ্ঠিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও পঞ্চায়েত প্রধানদের বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।
মঙ্গলবার ১৫ দিনের মতো গড়ায় চা শ্রমিকদের আন্দোলন। সিলেট জেলার ২৩টি বাগানের মধ্যে জাফলংসহ চারটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। এর বাইরে ১৯টি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। তবে সোমবার লাক্কাতোড়া বাগানসহ কয়েকটি বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তারা বাগানে গেলেও দিনভর কাজ না করেই বসে থাকেন।
এই অবস্থায় দুপুরে সিলেট গলফক্লাবে সিলেট ভ্যালির ২৩ বাগানের পঞ্চায়েত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা। এ সময় ক্লাবের বাইরে অবস্থান নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একইসঙ্গে সিলেট ভ্যালির সবকটি চা বাগানে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকেরা তাদের কর্মবিরতি পালন করেন। বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
কয়েকজন পঞ্চায়েত প্রধান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, শ্রমিক নেতারা কাজে ফেরার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটির সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধানরা ঐকমত্য নয়। এ কারণে ওই বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে।
স্থানীয় কামাইছড়া বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি বিমল ভর গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা কোনো অবস্থাই মানছেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজে আশ্বাস দিয়েছেন কিনা, সেটি তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তারা মনে করছেন প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে কেউ তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাই ৩০০ টাকা মজুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
সিলেট ভ্যালি চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, সিলেটের ২৩টি বাগানের মধ্যে ১৯টি বাগানের শ্রমিকরা কাজে নামেননি। চারটিতে কাজ চলছে। যেসব বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি, তাদের সঙ্গেও আমরা আছি। শ্রমিকদের পক্ষেই সবসময় শ্রমিক ইউনিয়নের অবস্থান। এখানে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো অবকাশ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে সকাল থেকে সিলেটে চা শ্রমিকরা আন্দোলন করেছেন। বিভিন্ন বাগানে চা শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা লাক্কাতোড়া বাগানের প্রবেশমুখে এসে জড়ো হন। সেখানে তারা বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন।
ওই সমাবেশে শ্রমিক শ্রমিকরা ঘোষণা দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলনে থাকবেন। এ সময় নানা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
সিলেটের বাগান মালিকরা জানান, শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ার কারণে প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে চা শিল্প। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করা না গেলে চা গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ক্ষতি কয়েক মাসেও পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
সারাবাংলা/এএম