শরীরে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে মোংলায় ফিরল ৩২ জেলে
২৪ আগস্ট ২০২২ ১৪:৩৩
মোংলা: বৈরি আবহাওয়ায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে ডুবে যায় অনেক ফিশিং বোর্ড। উত্তাল বঙ্গোপসাগরে কোনোরকমে বোর্ডে থাকা ড্রাম ধরে ৫ দিন ভাসছিল শ খানেক জেলে। ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে, তাদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় ভারতীয় কোস্টগার্ড বাংলাদেশের ৩২ জেলেকে উদ্ধার করে। তারা বুধবার (২৪ আগস্ট) বাড়িতে ফিরে গেছে পরিবারের কাছে। তাদের শরীরে রয়েছে ক্ষত চিহ্ন। সাগরে ভাসতে ভাসতে চোখের সামনে অনেকেই মরতে দেখেছে অনেককে। উদ্ধার হওয়া এসব জেলের বাড়ি পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায়।
গত ১৮ ও ১৯ আগস্ট বৈরি আবহাওয়ায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাছ ধরার ট্রলার এফবি জান্নাতুল ফেরদৌস, এফবি আব্দুল্লাহ-১, এফবি ছগির ও এফবি মায়ের দোয়া ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে ভারতীয় জলসীমায় চলে যায়। এসময় সমুদ্রে টহলরত অবস্থায় ভারতীয় কোস্টগার্ড ২০ আগস্ট ১০ জেলেকে উদ্ধার করে। পরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের এয়ারক্রাফটের মাধ্যমে সাগরে ভাসতে থাকা আরও ২২ জেলেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া ৩২ জেলেকে ২৩ আগস্ট দুই দেশের কোস্টগার্ড সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ রেখায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজ তাজউদ্দীনের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর জেলেদের মোংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দফতরে নিয়ে আসে। আজ ২৪ আগস্ট জেলেরা বাড়ি ফিরে গেছে।
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার ফয়সাল (২০) জানান, ইঞ্জিন বিকল হয়ে ডুবে গেছে ট্রলার। সব হারিয়ে জীবন নিয়ে ফিরে এসেছি।
ভোলার রহিম (৬০) জানান , ৪০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরি । এমন ঝড় কখনও দেখিনি। ভয় পেয়েছি, আর এ পেশায় যাব না।
পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার জেলে এনায়েত চৌধুরী (২২) জানান, কোনোরকমে ট্রলারে থাকা ড্রাম ধরে ৫ দিন ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ি।
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ইউসুফ (৩৮) জানান, সাগরে ভাসতে ভাসতে চোখের সামনে তিনি অনেককেই মরতে দেখেছে।
পটুয়াখালী জেলার মহিপুর উপজেলার রাব্বি (২৫) জানান, ৫ দিন তারা অভুক্ত অবস্থায় থেকে জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তাদের মতো বাকিদেরও একই অবস্থা হয়েছিল।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন সদর দফতরের স্টাফ অফিসার (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এএসএম লুৎফর রহমান জানান, দুই দেশের কোস্ট গার্ডের সমঝোতার মাধ্যমে ভারতীয় কোস্ট গার্ড ২৩ আগস্ট ৩২ জন জেলেকে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ রেখায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জাহাজ তাজউদ্দিনের কাছে হস্তান্তর পর জেলেদের কোস্টগার্ড মোংলা ঘাটিতে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত ৩২ জন জেলেকে মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ২৩ আগস্ট রাত ১০টার দিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কমলেশ মজুমদার জানান, ৩২ জেলেকে কোস্টগার্ডের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে তাদের পরিবারের মাছে বুঝিয়ে দিয়েছি এবং তারা নিজ বাড়িতে রওয়ানা দিয়েছেন। উদ্ধার হওয়া জেলেদের বাড়ি পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী জেলায়।
জেলেরা গত ১৫ আগস্ট সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য বঙ্গোপসাগরে রওনা দেয়। এর আগেও সাগর থেকে আরও কয়েকশ জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এখনও অনেক জেলে নিখোঁজ রয়েছে ।
সারাবাংলা/এসএসএ