সিগারেটে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার
২৪ আগস্ট ২০২২ ১৬:১৮
ঢাকা: সঠিক কর কাঠামোর অভাবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার তামাকজাত দ্রব্যে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। সিগারেটের প্যাকেট মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা দাম এবং গবেষণায় পাওয়া বিভিন্নস্তরের সিগারেটের খুচরা বিক্রয় মূল্যর পার্থক্য থেকে সরকারের প্রাপ্য অংশ হিসাব করে সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতি বের করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট করারোপ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ এবং বিএনটিটিপি সেমিনারটি আয়োজন করে।
সেমিনারে জানানো হয়, অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের ২০ শলাকার প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৭০ টাকা হলেও বিক্রিত গড় মূল্য ২৯৪ দশমিক ২৯ টাকা। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ওপর থেকে কর আদায় করা সম্ভব হলে সরকার আরও প্রায় ৫৮৩ কোটি টাকা বেশি পেতে পারতো। একইভাবে উচ্চস্তর থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা, মধ্যমস্তর থেকে প্রায় ২৩৭ কোটি টাকা এবং নিম্নস্তর থেকে আরও ৩ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় সম্ভব হতো।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এত অল্প শেয়ার নিয়ে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বোর্ডে সরকারের এতজনের পরিচালক থাকাটা দেখতেও কেমন লাগে। আমরাও চাই তামাকের ব্যবহর কমে আসুক। সমন্বিতভাবে তামাকের ব্যবহর কমাতে হবে। আমার জায়গা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করব।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী হোসেন আলী খন্দকার। আলোচক ছিলেন ক্যাম্পেইন ফর ফ্রিকিডসের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মাহফুজুর রহমান, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং দ্য ইউনিয়নের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক ও সাংবাদিক সুশাস্ত সিনহা। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বর্তমানের অ্যাড ভ্যালোরেম করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি দ্রব্যের বাজার ও বিক্রি পর্যবেক্ষণে এবং কর আদায়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এছাড়া সিগারেটের চার স্তরভিত্তিক কর কাঠামো ধারাবাহিকভাবে এক স্তরে নিয়ে আসতে হবে। সিগারেট ও বিড়ির খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং ভোক্তারাও তামাক গ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, ‘কর ফাঁকি রোধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সামগ্রিক সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে একটি জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।’
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম