বৈরী আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মাঝিরা, তবুও সাগরযাত্রা
২৫ আগস্ট ২০২২ ০৮:৫১
কক্সবাজার: সমুদ্র খোলা থাকার পরেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছশূন্য ট্রলার নিয়ে ফিরছে জেলেরা। একদিকে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া। সবমিলে লোকসান গুনছেন সাগর থেকে খালি হাতে ফেরা মাঝি ও ট্রলার মালিকরা। তবুও আবহাওয়া স্বাভাবিক হতেই নতুন স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারে ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৬ হাজার। অনিবন্ধিত অর্ধলক্ষাধিক। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এসব জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত।
চলতি মাসেই সতর্কতা সংকেত জারি ছিল তিন বার। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার ট্রলার ডুবির ঘটনায় মারা গেছে ৭ জেলে। উদ্ধার হয়েছে ১১ জন। মাছ ধরার ট্রলারগুলো একবার গভীর সাগরে গেলে অবস্থান করে ১০ থেকে ১৫ দিন। ওই সময় মাঝিমাল্লাদের চাল-ডালসহ রান্নার উপকরণ এবং ট্রলার চালাতে জ্বালানি তেলে লাগে দেড় থেকে দুই হাজার লিটার। একদিকে জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুন। তার মধ্যে বৈরী আবহাওয়া। এতে হতাশ সাগর থেকে খালি হাতে ফিরা মাঝিমাল্লা ও ট্রলার মালিকরা।
শহরের ফিরাসী ঘাটের জেলে লিয়াকত মিয়া জানান, দীর্ঘ ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরতে যেতে না পেরে এমনিতেই কষ্টে ছিলেন। এদিকে সাগর খোলা থাকার পরেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই। এভাবে চললে পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে।
ট্রলার মাঝি সাইফুল ইসলাম জানান, গত ৬ দিন আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে সাগরে গিয়েছিলাম। কিন্তু উত্তাল সমুদ্রের কারণে মাত্র ৭৬টি মাছ নিয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে আবার নতুনভাবে সাগরে যাচ্ছি, আশা করি এবার খালি হাতে ফিরতে হবে না।
ট্রলার মালিক ফরহাদ হোসেন জানান, একেকটা ট্রলার একবার গভীর সাগরে গেলে অবস্থান করে ১০ থেকে ১৫ দিন। ওই সময় মাঝিমাল্লাদের চাল-ডালসহ রান্নার উপকরণ এবং ট্রলার চালাতে জ্বালানি তেলে লাগে দেড় থেকে দুই হাজার লিটার। সব কিছুর দাম বাড়তি থাকার কারণে যেসব ট্রলারে আগে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হত এখন হয় ৬-৮ লাখ। তার মধ্যে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছে না। বেশিরভাগ ট্রলার মালিক ঋণ করেই এই ব্যবসা চালায়। এই মুহূর্তে কিভাবে কি করবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। তবে আশায় আছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ত ভাল ব্যবসা হবে।
কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলারগুলো যদি সাগরে অবস্থান করতে না পারে তাহলে অনেক বেশি লোকসানে পড়তে হয়। এই পরিস্থিতিতে অনেক ট্রলার ফিরতে দেখা গেছে খালি হাতে। এটি খুবই দুঃখজনক। এমনো অনেক ঋণগ্রস্থ ট্রলার মালিক আছেন যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে হারিয়ে গেছে। এরকম লোকসান অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ট্রলারগুলো মাছ আহরণে যেতে পারবে কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সারাবাংলা/এনএস