Thursday 16 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনৈতিক প্রভাব আর ফেনসিডিল ব্যবসা দিয়েই কোটিপতি রানা


২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:২২ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:২৮

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ৩০ বছর আগে, রানার বাবা আব্দুল খালেক প্রথমে ফেরি করে তেল বিক্রি করতেন, পরে তেলের ঘানি দেন, এরপর শুরু করেন খৈলের ব্যবসা। সেজন্য তাকে স্থানীয়রা ‘কলু খালেক’ নামেই চেনেন। সেই কলু খালেকের ছেলে সোহেল রানার উত্থানটা ছিল সাভারবাসীর চোখের সামনে। স্থানীয়রা জানালেন, প্রথমে রাজনৈতিক শখ্যতা, পরে সন্ত্রাসী বাহিনী এবং সাভার বাসস্ট্যান্ডে ফেনসিডিল ব্যবসা করেই বিত্ত-বৈভবের মালিক হন সোহেল রানা, হয়ে যান কোটিপতি।

বিজ্ঞাপন

২৩ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জয়মণ্ডপ গ্রামে থাকতেন রানার পরিবার। সেখান থেকে তার বাবা এখানে এসে তেলের ব্যবসা শুরু করেন। পরে রানা হয়ে ওঠেন এই এলাকার অঘোষিত সম্রাট, বাসস্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তার ফেনসিডিল ব্যবসা। কিন্তু সব সরকারের আমলেই রাজনৈতিক সখ্যতা বজায় রাখায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস এলাকার কারও ছিল না, বাসস্ট্যান্ড এলাকার সবকিছুই হতো তার ইচ্ছেমতো। রীতিমতো এক আতঙ্কের নাম ছিল রানা প্লাজার মালিক এই সোহেল রানা। অথচ রানার বাবা আব্দুল খালেক ছেলেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, রানাকে নিয়ে মিথ্যা লিখেছেন সাংবাদিকরা। কেবলমাত্র সাংবাদিকদের মিথ্যা লেখার কারনে ‘নির্দোষ রানা’ আজ কারাগারে।

এমনকী রানার নামে থানায় কোনও মামলা, জিডি নেই। এলাকার মানুষ রানাকে ঠিকমতো চেনে না দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবল আমি মনে করুম কেন, কেউ মনে করে না যে রানার দোষ আছে। আশেপাশের মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখেন-কেউ রানারে চেনে কি না। কতজন তো ওরে চেনেই না। মানুষের কাছে যায় না, কোনো আড্ডাবাজিতে নাই।’

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৪ সালে সাভার কলেজ সংসদের সহসভাপতি ছাত্রদল নেতা হেলালউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জাকিরের সঙ্গে পরিচয় দিয়েই তার উত্থানের শুরু। জাকিরের সঙ্গে বোনের  বিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হেলালউদ্দিনের সঙ্গে তার পারিবারিক সর্ম্পক গড়ে ওঠে। এরপরই রানার নেতৃত্বে হয় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী-যারা কিনা সাভারে ‘রানা বাহিনী’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১০ সালে বাসস্ট্যান্ডে গড়ে তোলে রানা প্লাজা। যদিও রানার বাবা আব্দুল খালেক দাবি করেছেন, ছেলের নাম দিয়ে তিনিই রানা প্লাজা নির্মান করেছেন, কোনওভাবেই ওই ভবনের মালিক রানা নয়।

তবে ছাত্রদল নেতার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে রানার বিত্ত-বৈভব গড়ে উঠলেও সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে রানাও তার রাজনৈতিক পরিচয় বদলে ফেলেন। তার সখ্যতা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদ তথা মুরাদ জংয়ের সঙ্গে। তার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে রানা পেয়ে যান সাভার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্ববায়কের পদ। ২০১০ সালে রানা প্লাজার উদ্বোধনও করেন মুরাদ জং।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সারাবাংলাকে বলেন, তৌহিদ জং মুরাদের হরতালবিরোধী যেকোনও মিছিল, জনসভায় লোক ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতেন রানা। জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সাংসদের কাছের লোক হবার সুবাদে যে কোনও কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন রানা।

এমনকী রানা প্লাজার শ্রমিকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিছিলে নিয়ে যাবার অভিযোগও করেছেন আহত শ্রমিকরা। ভবনধ্বসের আগেও হরতালবিরোধী মিছিল করার জন্য তিনি লোক জড়ো করছিলেন বলে জানান, রানা প্লাজা সারভাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান হৃদয়।

স্থানীয়রা বলেন, সাভার বাসস্ট্যান্ডের ভেতর দিয়ে বাজার রোড এলাকাতে রানার যে আটতলা ‘রানা টাওয়ার’ নামের ভবনটি রয়েছে তার মূল্য রয়েছে ৫০ কোটি টাকার মতো। ধামরাইতে রয়েছে ইটভাটা। রানা প্লাজা যে স্থানে গড়ে উঠেছিল তার ৭ থেকে ৮ শতাংশ জমি ছিল কেবল রানার, পেছনর বাকি অংশ রানা দখল করে নেয়। ‘সাধাপুর খাল’ নামের সরকারি খালটি ভরাট করে নেয় রানা।

সামনে পেছনে মিলিয়ে মোট ১৮ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছিল রানা প্লাজা, যার দাম কয়েক কোটি টাকা। ছিল একাধিক গাড়ি, যার কয়েকটি গাড়ি ভবন ধ্বসের দিনে ভবনের চাপায় পড়ে নষ্ট হয় যায়।

স্থানীয়রা জনালেন, সাভার এলাকার ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল রানা। মাদক সিন্ডিকেটের একটি বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ করতো সে। আর এভাবেই রাজনৈতিক প্রভাব এবং মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের ফলে রানা হয়ে ওঠে সাভার এলাকার কোটিপতি।

রানা প্লাজা ধ্বসের পাঁচদিন পর ২৯ এপ্রিল বেনাপোল থেকে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

সারাবাংলা/জেএ/জেএএম

বিজ্ঞাপন

২০২৫ সালেই বার্সায় ফিরছেন মেসি?
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর