Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বেনজীরের ভিসা বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ আগস্ট ২০২২ ১৭:০৯

ঢাকা: জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদকে ভিসা দেওয়া বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে বেনজীরকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তকে সরকারের ‘অপরিনামদর্শী ফ্যাসিবাদী’ সিদ্ধান্ত হিসেবেও মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল।

শনিবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে যে ডেলিগেটস তালিকা প্রদান করেছে, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। আমরা বিস্ময় ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত এই (বেনজীর আহমেদ) অপরাধীকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে যুক্ত করা হয়েছে।’

‘এর মধ্য দিয়ে তারা প্রমাণ করল, বিশ্ববিবেক ও মতামতকে তোয়াক্কা না করে তারা তাদের মানবতাবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়ে যাবে। ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে গুম, খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ংকর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বৈধ্যতা প্রদানের চেষ্টা করবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। সরকারের এই অপরিণামদর্শী ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্তের দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্রে শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান করায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৪৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি শুধুমাত্র জাতিংঘের সুনির্দিষ্ট সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন এবং তার অবস্থান সীমিত থাকবে জাতিসংঘ প্রাঙ্গণে। আমরা মনে করি, এই ধরনের শর্তসাপেক্ষে ভিসা প্রদান বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর। সরকারের এই ধরনের দায়-দায়িত্বহীন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অসংখ্য নেতাকর্মীকে সরকার গুম করেছে, ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে, বিনা বিচারে গ্রেফতার করে নির্যাতন করেছে। দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, মিটিং মিছিল করার কোনো অধিকার নেই, গণমাধ্যমগুলোর উপর সেলফ সেন্সারশিপে বাধ্য করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরাসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছি। সেদিকে কর্ণপাত করা তো দূরে থাকুক জাতিসংঘকেও তারা তোয়াক্কা করছে না। হত্যা, গুমখুন চালিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতে র‌্যাবের ওপর এবং র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরপ, ভিসা বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাসেলেটের রিপোর্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে কিছু বলা হয়নি’স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) অপব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং সত্যের অপলাপ করেছেন। ইউএস হিউম্যান রাইটসের যে রিপোর্ট সেই রিপোর্টে পর পর চারপাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টেও বিষয়টি উঠে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘মিশেল ব্যাসেলেটের যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সেখানে পরিস্কার করে বলা হয়েছে যে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন যদি চলতে থাকে এবং এর সঙ্গে যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কেউ জড়িত থাকে, তাহলে সেটা দেখার জন একটা সিষ্টেম তৈরি করা উচিত। সব শেষে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটা তিনি বলেছেন, এটার জন্যে একটা সম্পূর্ণ স্বাধীন সংস্থা তৈরি করতে হবে যারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো তদন্ত করবে।’

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপি চলমান কর্মসূচিতে হামলা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৫০টির অধিক স্থানে হামলা হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক ও গ্রেফতার হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে প্রায় ২০টার মতো জায়গায়, আসামী করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার মানুষকে এবং মামলা করা হয়েছে ১৫টার উপরে।’

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি, গাইবান্দার গোবিন্দগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, ফেনীর ছাগলনাইয়াফুলগাজী, মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর, ময়মনসিংহের ফুলপুর, ত্রিশাল, বরিশালের মেহিন্দিগঞ্জে, খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি, খুলনার দৌলতপুর, টাঙ্গাইলে ঘাটাইল, সফীপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, চট্টগ্রামে সন্দ্বীপ ও বাশখালী, ঝালকাঠি, যশোর, ঝিনাইদাহের শৈলকুপা, নরসিংদীর রায়পুরা, রাজশাহীর কাশিডাঙ্গাসহ প্রায় ৫০ টির অধিক জায়গায় হামলা হয়েছে। হামলা করা হয়েছে যশোরে দলের স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য তরিকুল ইসলামের বাড়িতে, জেলার সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল ইসলাম সাবু, মিজানুর রহমান, ফেনীতে শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাড়িতে হামলা, টাঙ্গাইলের সফীপুরে আহমেদ আজম খানের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার পরও হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠে অবস্থান করছে’বলেন মির্জা ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।

সারাবাংলা/এজেড/এএম

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর