ঘিওরে শিশু ধর্ষণ, মীমাংসার জন্য চাপ প্রভাবশলীদের
২৭ আগস্ট ২০২২ ১৮:৫৯
মানিকগঞ্জ: জেলার ঘিওর উপজেলায় শিশু ধর্ষণ মামলায় আপস-মীমাংসা করতে ভুক্তভোগী পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অসহায় ওই শিশুটির পরিবার। সম্প্রতি মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেছে ১৪ বছরের এক কিশোর। গত বুধবার তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হলেও ওই কিশোরের পক্ষে এলাকার কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ নেতারা ওই পরিবারটিকে আপস করার জন্য নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিশুটির চাচার।
তবে শিশু ধর্ষণের ওই মামলাটি কোনোভাবেই আপস-মীমাংসা করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঘিওর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আমিনুর রহমান। যারা চাপ প্রয়োগ করছে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার কথা জানান তিনি।
ওই শিশুটির চাচা বলেন, ‘ভাতিজিকে ধর্ষণের ঘটনার পর অভিযুক্ত ওই কিশোরের বিরুদ্ধে আমার বড়ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এরপর গত বুধবার আসামিকে গ্রেফতার করার পর থেকেই নানাভাবে এলাকার কিছু মানুষ দিয়ে আসামি পক্ষের লোকজন ঘটনাটি আপস-মীমাংসা করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনো আপসে আমরা যাব না। আমরা চাই আইনের মাধ্যমে অপরাধীর কঠিন শাস্তি। যারা মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছেন তাদের একজন (এলাকার মাতব্বর) আমাকে জানিয়েছেন— মানিকগঞ্জের একজন বড় আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ নেতার কাছে আসামির পক্ষের লোকজন যায়। ওই নেতা মাতব্বরকে বলে দিয়েছে যেহেতু তোমার এলাকার ঘটনা সেহেতু বিষয়টি বসে মীমাংসা করা যায় কি না। এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা আরজুর মোল্লার মাধ্যমে এই প্রস্তাব আমাদের কাছে দেওয়া হলে আমরা তা প্রত্যাখান করে দিয়েছি। শুধু আরজু মোল্লাই নয় আসামির পক্ষে এলাকার ওহাব নামের আরও এক ব্যক্তি বিভিন্ন মানুষ পাঠিয়ে ঘটনাটি মিটিয়ে ফেলার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। এছাড়া আসামির পরিবারের নারীরা বাড়ি এসে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে এবং বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়েছে। আসামিরা বলে বেড়াচ্ছে— মীমাংসা না করা হলে যেকোনোভাবেই ওই কিশোরকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে তারা আমাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে। এমন হুমকি তারা সব সময় দিচ্ছে।’
সিংজুরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মো. আসাদুর রহমান মিঠু বলেন, ‘শিশু ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং আসামি গ্রেফতারও হয়েছে। আইন তার গতি চলবে। এ ঘটনা নিয়ে আমার এলাকায় কেউ আপস-মীমাংসা করতে পারবে না। আমি সেটা কখনোই করতে দেব না।’
এ বিষয়ে ঘিওর থানার ওসি আমিনুর রহমান বলেন, ‘এলাকায় বসে যদি কেউ ধর্ষণ মামলার মীমাংসা করার জন্য ভুক্তভোগীদের চাপ দেয় সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এ মামলা আদালত ছাড়া অন্য কোনোভাবে মীমাংসা হওয়ার বিন্দু পরিমাণ সুযোগ নেই। শিশুটির মেডিকেল ও ২২ ধারা সবই সম্পন্ন হয়েছে। আমাকে কেউ কোনোভাবে প্রভাবিত করে এই মামলার ব্যত্যয় ঘটাতে পারবে না।’
এর আগে, গত ২২ আগস্ট (সোমবার) দুপুরে শিশুটি বাড়ির পাশে খেলা করার সময় মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় ওই কিশোর। এরপর ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা কাউকে না জানাতে ভয় দেখিয়ে শিশুটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ওই কিশোর। বাড়ি ফিরে শিশুটি ধর্ষণের বিষয়টি তার মাকে জানায়। এ ঘটনায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরদিন তাকে ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শিশুটিকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার পর গত বুধবার শিশুটির পিতা বাদী হয়ে ঘিওর থানায় ওই কিশোরকে আসামি করে ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাত দমন আইনে মামলা করেন। এরপর ওই দিনই ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সারাবাংলা/এনএস