‘বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলবরা এখনো বাংলাদেশের শত্রু’
২৭ আগস্ট ২০২২ ২১:৪৯
ঢাকা: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কুশীলব, যারা নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করেছেন তারা এখনো বাংলাদেশের শত্রু। তারা ২১ আগস্ট ঘটিয়েছে। সেজন্যই ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন করা হবে।
শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দলটির আইন বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তাতে সমস্ত বাঙালি জাতি ক্ষতিগ্রস্থ এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা বঙ্গবন্ধু পরিবার। এখন স্বাভাবিক নির্দেশনা না পর্যন্ত এবং এইখানে যদি কোনো পরিমার্জন পরিবর্ধন বা সংশোধন করতে হয় সেইগুলো না করে এই জিনিসটা আমি জনসম্মুখে উপস্থাপন করব না।’
তিনি বলেন, ‘কমিশন করতে হবে কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা আমাদের বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধু কোনটা আগে চাইতেন? ঠিক একথা কিন্তু উনি (শেখ হাসিনা) ১৯৯৬ সালেও বলেছিলেন। আমরা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে চার মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলেও উনি চাইতেন ওনাকে সাধারণ মানুষের কাতারে রাখতে এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে বিচার পাায়, ওনার বিচারও ঠিক সেইভাবে হবে। ঠিক সেই কারণেই এটা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কমিশনের কাজের আগে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করে যাচ্ছেন সেটা অন্তত পক্ষে কিছুটা সফল হোক। তাই আপনারা দেখেছেন, ২৫ জুন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে বঙ্গবন্ধু কন্যা উদ্বোধন করেছেন এবং আরও অন্যান্য মেগাপ্রজেক্টগুলো আছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজগুলোই করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করার কাজটা করে যাচ্ছেন। যার ফলে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে। ২১০০ সালে বদ্বীপ পরিকল্পনা আছে। এগুলো করা হলেও এগুলোকে যদি একটা মজবুত প্ল্যাটফর্মে রাখা না হয়, যারা বাংলাদেশের শত্রু তারা কিন্তু বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেবে।’
আজকে প্রায় ৪৭ বছর পর গঠিত এই কমিশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আনিসুল হক বলেন, ‘এই কমিশন সঠিকভাবে ইতিহাস তুলে ধরবে, তারা চিহ্নিত করবে? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার নেপথ্যে কারা ছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো বাংলাদেশের শত্রু। তারা ২১ আগস্ট ঘটিয়েছে। তাদের যদি নিহ্নিত করা না হয়, তাদের পরিচিতি যদি এদের সামনে তুলে ধরা না হয় তাহলে ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার পরও কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেটা ব্যহত করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করে যাবে, বাঙালিদেরকে হত্যা করে যাবে। সেজন্য এই কমিশন তৈরি করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা কিন্তু কোনো প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করা হয়নি। ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি সঠিকপথে চালানই এটার বড় কাজ। সে কারণে যারা কমিশনে থাকবেন, তাদের হয়ত অনেক সময় লাগবে। আমাদের এখানে বলা রাখা ভাল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের একটা দায়বদ্ধতা আছে। তাদের যদি এদেরকে চিহ্নিত করে দিয়ে না যাই, আমরা যখন কবরে থাকব আমাদের বলবে- এই ব্যাটারা মরে গেছে কিন্তু আমাদের কাছে ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে দিয়ে যাই নাই। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও চিহ্নিত করে দেয় নাই। আমরা আজকে সমুদ্রের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছি। কারা শত্রু আর কারা মিত্র।’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানসহ আরও অনেকে। আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন দলের আইন সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস