Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্রম বাজারে দক্ষতা ঘাটতি ৩০ শতাংশ: গবেষণা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ আগস্ট ২০২২ ১৭:৩৩

ঢাকা: দেশের শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ব্যাপক দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, যা ৩০ শতাংশ। তবে খাতভিত্তিক এ সংখ্যা আলাদা। কিন্তু সেই তুলনায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। কিছু ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ থাকলেও তা মানসম্মত বা বর্তমান চাহিদাকে পূরণ করে না। বিশেষ করে মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মের ক্ষেত্রে এই গ্যাপ আরও অনেক বেশি। ফলে পোশাক শিল্পে এদেশ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশি শ্রমিকদের পেছনে চলে যাচ্ছে। এজন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের বিকল্প নেই। একইসঙ্গে শ্রমিকদের কর্ম সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আগামী ১০ বছরে দেশের ৫টি নতুন খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের চাহিদা সৃষ্টি হবে। এর মধ্যে পাট, ফার্নিচার এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাত অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এসক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার (২৮ আগস্ট) ‘লেবার মার্কেট স্টাডিজ ফর এসইআইপি অন স্কিল ডিমান্ড, সাপ্লাই অ্যান্ড মিসম্যাচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং ন্যাশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট অথরিটির (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজ। আলোচক হিসেবে ছিলেন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সায়মা হক বিদিশা, নির্বাহী প্রকল্প পরিচালক ইখলাসুর রহমান, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চীফ ইনোভেশন অফিসার তাপস কুমার মজুমদার, প্রাণ-আরএফএলের করপোরেট ফইান্যান্স’র পরিচালক উজমা চৌধুরী এবং ইউএনডিপির পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. কাজী ইকবাল।

মূল প্রবন্ধে ড. কাজী ইকবাল বলেন, শ্রম বজারে মিসম্যাচ বলতে বলা হয়েছে, যে পরিমাণ দক্ষ শ্রমিক দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ম্যানেজার ও প্রফেশনালদের মধ্যে এই ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, তৈরি পোশাক শিল্প এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে উচ্চ পর্যায়ে দক্ষ লোকের ব্যাপক ঘাটতি আছে। আবার কোথায় অষ্টম শ্রেণি পাশ কর্মীর দরকার হলে দরখাস্ত আসছে মাস্টার্স পাশের। আবার কোথায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী দরকার হলে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আন্ডার কোয়ালিটি গ্যাপ আছে ৭১ শতাংশ। আবার ভার্টিক্যাল মিসম্যাচ (চাকরি প্রার্থীদের অযোগ্যতা) আছে ৮৩ শতাংশ। তবে নিম্ম পর্যায়ের শ্রমিকদের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি কম। যত উপরের দিকে উঠা যায় ততই দক্ষতার ঘাটতি বেশি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এদেশের শ্রমিকদের মধ্যে কর্মক্ষমতা কম। এক্ষেত্রে সবার উপরে অবস্থানে সিঙ্গাপুর আর বাংলাদেশের অবস্থান নিচ থেকে চতুর্থ। অর্থাৎ কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের পরে। এছাড়া ভারত, শ্রীলংকা, মঙ্গোলিয়াসহ অনেক দেশই বাংলাদেশের উপরে অবস্থান করছে। গত ১ বছরে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ পেয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমিক।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, শ্রম বাজারে সঠিক মজুরি প্রশিক্ষণের আকাঙ্ক্ষাকে বাড়িয়ে দেয়। শ্রম বাজারে মজুরির সঙ্গে প্রশিক্ষণ মেলাতে হবে। আগামী ১০ বছরে শ্রমিকের যে চাহিদা হবে সে অনুযায়ী এখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এছাড়া বিদেশি শ্রমিকদের আরও দক্ষ করে পাঠাতে হবে। তা না হলে অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে টেকসই উন্নয়নে পিছিয়ে পড়বে দেশ।

বক্তারা বলেন, শিল্প কারখানায় অদক্ষ শ্রমিক যেমন উৎপাদনশীলতা কমাচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে এক সময় মধ্য আয়ের ফাঁদের মতো নিম্ন উৎপাদনশীলতা ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। ভোকেশনাল শিক্ষাকে যাতে সামাজিকভাবে ছোট করে দেখা না হয় সেজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে কোন খাতে কেমন শ্রমিকের চাহিদা আছে বা আগামীতে নতুন চাহিদার সৃষ্টি হবে সেসসব বিষয়ে ব্যাপক তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি মনে করি সুশাসনের আগে উন্নয়ন জরুরি। কেননা দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ দু’বেলা খাবার, বিশুদ্ধ পানি এবং সঠিক বিচার চায়। এগুলো থাকলেই তারা খুশি। এজন্য আগে উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি সুশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা দরকার।’

সারবাংলা/জেজে/এনএস

দক্ষতা ঘাটতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান শ্রম বাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর