চেক ডিজঅনার মামলায় কারাগারে পাঠানো যাবে না: হাইকোর্ট
২৮ আগস্ট ২০২২ ২২:২৪
ঢাকা: চেক প্রত্যাখ্যানের (চেক-ডিজঅনার) মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে আদালত বলেছেন, ‘কোন ব্যক্তিকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থী। নেগোসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যাক্ট (এনআই অ্যাক্ট) আইনের চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর।’
রোববার (২৮ আগস্ট) চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত এনআই অ্যাক্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া নেগোসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি গাইড লাইন করে দিয়েছেন।
হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো, কারাগারে রাখা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এবং ইন্টারন্যাশনাল কভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের অনুচ্ছেদ ১১ এর পরিপন্থী। বাংলাদেশ এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে চেক ডিজঅনার মামলায় কোন ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারে না।
আদালত উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘সিংগাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজনারের মামলাগুলোকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ এনআই অ্যাক্ট আইনে ১৯৯৪ সালে পেনাল কোড সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘কন্ট্রাকচুয়াল অব নেগোসিয়েশন বা চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে জেলে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দ্বায় দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয় তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারও কাম্য নয়।’
আদালত আরও মনে করে, এনআই অ্যাক্ট আইনের ১৩৮ ধারা দ্রুত সংশোধন করে জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করা আবশ্যক। আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, মহান জাতীয় সংসদ অতি দ্রুত এনআই অ্যাক্ট আইনের ১৩৮ ধারা সংশোধন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
আদালত আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ যতদিন না এনআই অ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারার সংশোধন না করেন বা সংশোধনী আনা না হয় ততদিন পর্যন্ত এনআই অ্যাক্ট আইনের ১৩৮ ধারার আওতায় চেক ডিজনারের মামলা আপোষযোগ্য হবে। চেক ডিজঅনারের মামলা বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন দেশের সব আদালতে সাজার পরিবর্তে তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে।’
আদালত এই রায়ের অনুলিপি দেশের সব আদালতে ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও