জামায়াত এ কথাগুলো ২০০৬ সালে কেন বলল না?
২৯ আগস্ট ২০২২ ২২:৩৮
নজরুল ইসলাম খান। বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শ্রমিক নেতা। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান মেশিন টুলস কারখানার (বর্তমান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি) শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের মার্চে গাজীপুরের জয়দেবপুরে সর্বদলীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ গঠন হলে সেখানে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নজরুল ইসলাম খান। এই পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
কালের পরিক্রমায় নজরুল ইসলাম খানের রাজনৈতিক পথ ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ’৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে এই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করছেন নজরুল ইসলাম খান। যে জোটের অন্যতম শরিক স্বাধীনতাবিরোধী ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’।
সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর মজলিশে শুরার এক ভার্চুয়াল সভায় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘২০ দলীয় জোটের আর কার্য্কর নেই। বিএনপি এই জোট কার্য্কর করতে চায় না। বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের অকার্য্কর জোট চলতে পারে না। আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। এর সঙ্গে তারা একমত পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’
জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমানের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা গণমাধ্যমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মোটের ওপর কথা বলছেন না। অন্য নেতারাও বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার (২৯ আগস্ট) সকালে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বিষয়টি নিয়ে সারাবাংলার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করেন। ওভার টেলিফোনে ১৭ মিনিটের ওই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আসাদ জামান। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
সারাবাংলা: ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক হিসেবে জোট শরিক জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য কীভাবে নিচ্ছেন?
নজরুল ইসলাম খান: উনার যে বক্তব্যটা ভাইরাল হয়েছে, সেটা তো অফিসিয়াল বক্তব্য না। একটা ইন্টারনাল প্রোগ্রামে পার্টির লোকজনের উদ্দেশে কথাগুলো বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়া এত হৈ চৈ কেন করছে, সেটিই তো বুঝে উঠতে পারছি না। জোটের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলে আমাদের জানানোর কথা। আমাদের তো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
সারাবাংলা: ‘২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে’— ডা. শফিকুর রহমানের এই বক্তব্যকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নজরুল ইসলাম খান: সেদিনের (২৮ অক্টোবর, ২০০৬) সেই ঘটনার জন্য তারা (জামায়াত) কি বিএনপিকে দায়ী করছে? সেদিন কী ঘটেছিল, সেই ঘটনার জন্য কি বিএনপি দায়ী? তারপর তো ২০০৮ সালে আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করলাম। ২০১৪ সালে একসঙ্গে নির্বাচন বয়কট করলাম। ২০১৫ সাল পর্যন্ত একসঙ্গে আন্দোলন করলাম। ২০১৮ সালে আমাদের প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচন করল। তাহলে এখন এ কথা বলছে কেন? জামায়াত ২০০৬ সালে এ কথাগুলো কেন বলল না। ২০১৬ সালেও তো কথাগুলো বলতে পারত। কারণ, ২০১৫ সালের পর লিটারেলি ২০ দলীয় জোট সেভাবে সক্রিয় নেই।
সারাবাংলা: এই নিষ্ক্রিয়তার জন্য জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান বিএনপিকেই দায়ী করেছেন। তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘বছরের পর বছর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। এই জোটের প্রধান দল বিএনপি জোটকে কার্যকর করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।’— এ বক্তব্যকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নজরুল ইসলাম খান: দেখুন, জোট হচ্ছে কয়েকটি দলের সম্বয়ে গড়ে ওঠা একটা প্রতিষ্ঠান। এখানে একক সিদ্ধান্তে কিছু হয় না। এখন আমরা যদি প্রশ্ন করি, জোটকে কার্যকর করার জন্য তারা কী উদ্যোগ নিয়েছে? জোটের জন্য তারা কী করেছে? কী পরামর্শ দিয়েছে জোটকে? সুতরাং এই দায় চাপানো কথাগুলো পরিহার করা উচিত।
সারাবাংলা: জোট থেকে যদি সত্যিই বেরিয়ে যেতে চায় জামায়াত, সেক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে?
নজরুল ইসলাম খান: প্রথম কথা হলো— জোট মানে এই নয় যে, কোনো দলের ওপর কোনো দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। সুতরাং কেউ যদি জোট ছেড়ে চলে যায় বা যেতে চায়, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কাউকে জোটে আনার জন্য জোর করা হয় না। আবার রাখার জন্যও জোর হয় না। দ্বিতীয় কথা হলো, যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, সেখানে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই। বরং তিনি (ড. শফিকুর রহমান) বলেছেন, ‘জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব।’ আপনারা লক্ষ্য করেছেন হয়তো- আমরা যে সংলাপগুলো করেছি, সেখানে একটা কথা বার বার বলেছি ‘যুগপৎ’ আন্দোলন। উনিও (ড. শফিকুর রহমান) সেই ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের কথাই বলছেন। অথচ আপনারা (গণমাধ্যম) কী পেলেন আর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ওদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলে দিলেন, ‘বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে’। খুব মজা পেয়েছেন উনারা (আওয়ামী লীগ)।
সারাবাংলা: এরই মধ্যে আপনারা ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শরিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে ফেলেছেন। জোটের বাইরে থাকা বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে এখন পর্যন্ত সংলাপে বসেননি। সে কারণেই কি গোলমালটা লাগল?
নজরুল ইসলাম খান: আসলে ওটার (জামায়াত আমিরের ভাইরাল ভিডিও) মধ্যে যে কন্টেন্ট আছে, মিডিয়াগুলো সেটা ভালো মতো রিড করেনি। ওখানে ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি, এর সঙ্গে তারা (বিএনপি) ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব।’ অর্থাৎ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ হয়নি- এটা সঠিক নয়। যেভাবেই হোক, সংলাপ হয়েছে।
সারাবাংলা: তাহলে শেষটা কী দাঁড়াল?
নজরুল ইসলাম খান: ডা. শফিকুর রহমান শিক্ষিত লোক। তিনি কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন কথাগুলো বললেন- সেটা তিনিই ভালো জানেন। জোট নেই, জোট ভেঙে গেছে অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে- এর কোনোটিই সঠিক নয়। যেটুকু উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, এর অনেকটাই মিডিয়ার আগ্রহের কারণে। সেই জন্যেই আমাদের মহাসচিব এ বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আমিও গতকাল পর্যন্ত কোনো কথা বলিনি।
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম
২০ দলীয় জোট জামায়াত নজরুল ইসলাম খান বিএনপি বিএনপি জামায়াত জোট ভেঙে যাচ্ছে