চলচ্চিত্র, ওটিটি ও অনুদান নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর বৈঠক
২৯ আগস্ট ২০২২ ২৩:৪৪
ঢাকা: চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক প্রবাহ, ওটিটি প্লাটফর্ম পরিচালনা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানসহ সংশ্লিষ্ট নানা প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিচালক, শিল্পী ও অংশীজনদের সাথে বৈঠক করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মিলিত হন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মোরশেদুল ইসলাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, তারিক আনাম খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, এস এ হক অলীক, আফসানা মিমি, চঞ্চল চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন, সৈয়দ গাউসুল আজম প্রমুখ।
বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “সম্প্রতি কয়েকটি সিনেমা আবার দর্শকদের হলে ফিরিয়ে এনেছে। সেই সিনেমাগুলোর একটি ‘হাওয়া’। এর পরিচালকের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আমি বিদেশে ছিলাম। জানার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলি। সেই মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যে কর্মকর্তা মামলা করেছে তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আইনের যদি ব্যত্যয় হয়ে থাকে তাহলে পরিচালককে নোটিশ করতে পারতো। সরাসরি কোর্টে গিয়ে মামলা করা সমীচীন হয়নি বলে আমি মনে করি।’
‘শনিবারের বিকেল’ সিনেমাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় হলি আর্টিজানে যে হামলা হয়েছিল সেই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে দু’জন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন এবং আমাদের পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গিদের দমন করেছিল। সেন্সর বোর্ডের অভিমত, সেই বিষয়গুলো সিনেমাটিতে আসেনি। সেজন্য এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে। সেটি তারা কিছুটা করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু সেটিও যথেষ্ট নয়। তারা আপিল করেছিল। আপিল কর্তৃপক্ষ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজককে জানিয়ে দেবে কী কী সংযোজন করা প্রয়োজন। সেগুলো সংযোজন হলে আমি মনে করি এই সিনেমা রিলিজ করার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে সেটি কেটে যাবে।’
ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘ওটিটি একটি ক্রমবর্ধমান আধুনিক প্লাটফর্ম এবং বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতা। আমরা এটিকে প্রমোট করতে চাই। ওটিটি প্লাটফর্ম এত বিস্তৃত, এত ব্যাপকভাবে ক্রমবর্ধমান যে এটিকে সেন্সর করা সম্ভব নয়। সেজন্য এটি একটি নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়।’
যারা ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করে তাদের দিয়েই মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে। সেই কমিটি কাজ করছে এবং সেই কমিটি সমস্ত অংশীজনদের সাথে আলাপ করে তারা এই নীতিমালা চূড়ান্ত করবে বলে জানান সম্প্রচারমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা এমন একটি নীতিমালা করতে চাই, যে নীতিমালা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং একইসাথে আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করবে।’
অনুদান নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সিনেমা শিল্প নানা সংকটের মধ্য দিয়ে এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। আমরা বাণিজ্যিক ছবিতে অনুদান দিয়েছি কারণ সিনেমা বানিয়ে আসলে পয়সা উঠতো না, এখন উঠবে। এখন আবার দর্শক ফিরে আসছে। সিনেমা হল বাড়ছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। একইসাথে আর্টফিল্মে অনুদান দেয়া প্রয়োজন। আর্টফিল্ম ব্যবসা করতে পারে না কিন্তু আর্টফিল্মের প্রয়োজন রয়েছে।’
সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারে সরকারের হাজার কোটি টাকা ঋণ তহবিলের কথা পুণর্ব্যক্ত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র ইতিমধ্যেই বিশ্ব অঙ্গণে কিছুটা জায়গা করে নিয়েছে। আমাদের অনেক ছবি এখন আমেরিকা, ইউরোপে চলে।’
সংস্কৃতিসেবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং দেশকে অপসংস্কৃতি, তরুণদের বিপথগামিতা, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি থেকে রক্ষার জন্য আসলে দেশে একটি সংস্কৃতি সুনামি দরকার বলে আমি মনে করি। সেটি যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের তরুণদেরকে, নতুন প্রজন্ম কে রক্ষা করতে পারব।’
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু প্রমুখ সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে অবস্থানকালেও দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের সমস্যা সমাধান করে দেওয়ায় আমরা মন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমাদের দাবির প্রতিটি বিষয়েই অত্যন্ত ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
সারাবাংলা/পিটিএম