Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাছ-মুরগির বিজ্ঞানসম্মত খামারে বদলে যাচ্ছে জাবুসা-শ্রীফলতলা

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ আগস্ট ২০২২ ০৮:১৫

খুলনা থেকে ফিরে: খুলনার রূপসা উপজেলার খুলনার রূপসা উপজেলার অবহেলিত গ্রাম ছিল জাবুসা। উপজেলার ৩ নং নৈহাটি ইউনিয়নের এই গ্রামে জোয়ারের লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে, জমিতে ফসল কম হতো। ফলে দারিদ্র্য এই এলাকার মানুষের নিত্যসঙ্গী। এই গ্রামে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ নতুন এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।

গ্রামে তানভীর ফিসারিজ নামে একটি খামারের মাধ্যমে রেনু পোনা থেকে শুরু করে বাগদা, গলদা চিংড়ির পাশাপাশি সাদা মাছ তথা রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউস, সিলভারকার্পসহ বিভিন্ন কার্প জাতীয় মাছ ছাষ হয়। এতে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে গ্রামের আর্থ সামাজিক চিত্র।

রোববার (২৮ আগস্ট) খুলনার রূপসা উপজেলার প্রত্যন্ত সেই গ্রামে সরেজমিন পরিদর্শন করে এর বাস্তব চিত্র দেখা যায়।

জাবুসা গ্রামের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম লিটু সারাবাংলাকে বলেন, ‘তানভীর ফিসারিজ মৎস চাষ শুরুর পর গ্রামের নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলেছে। জোয়ারের লোনা পানির কারণে যেসব জমিতে ফসল হতো না। এখন ওই সব জমিতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সাদা সোনা বা চিংড়ি। আর সাদা মাছ তো আছেই। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করায় এলাকার গরিব মানুষ সেখানে কাজ করে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়েছে। মানুষ এখানে কাজ করার পাশাপাশি তাদের দেখাদেখি আরও নতুন নতুন খামার গড়ে তুলেছে।’

একই কথা বললেন, জাবুসা গ্রামের নৈহাটি ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. বাবর আলী। তিনি বলেন, ‘তানভীর ফিসারিজে চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছে। এই এলাকার বহু মানুষ এখানে রোজ ও মাস হিসেবে কাজ করে সাবলম্বী হয়েছে। তানভীর ফিসারিজের দেখাদেখি আরও বহু মানুষ মাছ চাষে উদ্যোগী হয়েছে। এলাকার বেকার ঘুরে বেড়ানো ছেলে মেয়েরা মাছ চাষ করে এখন সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ব্যাপক সমৃদ্ধ হয়েছে। তারা এলাকায় ব্যাপক পরির্তন এনেছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছি।’

একই এলাকার বাসিন্দা এস এম আসাফ-উদ-দৌলা বলেন, ‘ওই ফিসারিজ গ্রামে আসায় আমরা বেশ উপকৃত হয়েছি। তারা ১০/১২ বছর থেকে এখানে আধুনিক প্রযুক্তিতে সফলভাবে মাছের চাষ করে এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।’

শুধু জাবুসা নয়, রূপসার ৩ নং নৈহাটি ইউনিয়নের আরও একাধিক গ্রাম ও ২ নং শ্রীফলতলা ইউনিয়নে মাছ ও ফোল্ট্রি ফার্ম করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে তানভীর ফিসারিজ ও তানভীর পোল্ট্রি ফার্ম। এই ফার্মের উদ্যোক্তা বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও প্রকাশনা সংস্থার ব্যবসায়ী আলহাজ মোহাম্মদ আবু সাঈদ। তার ঐকান্তিক চেষ্টায় দিনে দিনে বদলে যেতে থাকে গ্রামগুলোর চিত্র।

জাবুসার গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, ‘তানভীর ফিসারিজ ও পোল্ট্রির কারণে বেকার ছেলে মেয়েদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সংসারে অভাব অনটন দূর হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে পাঠানো হচ্ছে। উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশেও রফতানী হচ্ছে।’

জাবুসা গ্রামের স্থানীয় মসজিদের ইমাম সৈয়দ ওসমান গনি বলেন, ‘মাছের ঘেরতো বহু মানুষই করে, কিন্তু তানভীর ফিসারিজ যেভাবে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করছে তাতে তারা বেশ সফল হয়েছে। তারা সুন্দর পরিবেশে বিষমুক্ত ফিড দেওয়ার মাধ্যমে মাছ চাষ করছে। এলাকার মানুষ তাদের এই উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ দেখে শিক্ষা নিয়ে নিজেরাও মাছ চাষে সফল হচ্ছে।’

ফিসারিজের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পে দিনে দুইবার জোয়ারের পানি আসে। জোয়ার ভাটার কারণে প্রকল্পে মাছ চাষে বেশ সফলতা এসেছে। পাশাপাশি আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা, বাগদা ও হরিনা চিংড়ি চাষ করি। যা বিদেশেও যাচ্ছে।’

রূপসা উপজেলার সহকারী মৎস কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করলে মাছের উৎপাদন কয়েকগুন বেড়ে যায়। এরা সেটিই করছে। আমরা বিষয়টি সব সময় পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। এই খামারাটিকে আমরা একটি মডেল খামার বলতে পারি। এভাবে মাছ চাষ করলে আশা করছি এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থা আরও উন্নত হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় প্রানীজ আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও প্রচুর মাছ রফতানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশি মুদ্রা আয় করা সম্ভব। স্থানীয় যারা জমির লিজ দিয়েছেন মাছ চাষের জন্য তারাও তানভীর ফিসারিজের সফলতা দেখে দারুণভাবে মুগ্ধ হয়েছেন।’

এদিকে শ্রীফলতলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তানভীর পোল্ট্রির শেড। এখানে ব্রয়লার, লেয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের মুরগী উৎপাদন হয়। কোনো রকম এন্টিবায়োটিক ছাড়া এসব খামারে মুরগী ও ডিম উৎপাদন করা হচ্ছে।

২ নং শ্রীফলতলা ইউনিয় পরিষদের সদস্য জাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফার্মের কারণে এলাকার বেকার ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা দৈনিক ও মাস ভিত্তিতে এসব খামারে কাজ করছে। আমি তাদেরকে সবধরনের সহায়তা করছি। তাদের দেখাদেখি আরও অনেকে এলাকায় পোল্ট্রি ফার্ম করেছে।’

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ কুমার মজুমদার বলেন, ‘পোল্ট্রি ফার্মগুলো উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুরগি চাষ করে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মিটছে। আমরা উপজেলা প্রাণী সম্পদ দফতরের মাধ্যমে তাদের খামারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সবসময় টিকাসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সযোগিতা দিয়ে আসছি। তারা সে অনুযায়ী কাজ করছে। যার মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠন। সে লক্ষ্যে তানভীর ফোল্ট্রি খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে খামার পরিচালনা করে যাচ্ছে। আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাই।’

তানভীর পোল্ট্রি ফার্মের ম্যানেজার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এলাকায় তানভীর পোল্ট্রি ফার্মের কারণে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে পদ্মা সেতু হওয়ায় দ্রুত এ সব পণ্য রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

খামার বিজ্ঞানসম্মত চাষ মৎস্য চাষ লোনা পানি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর