জাহালমকে ৭ দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ
৩০ আগস্ট ২০২২ ০৯:২৩
ঢাকা: নিরাপরাধ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে সাত দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত। পাশাপাশি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
সোমবার (২৯ আগস্ট) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান ও আনিসুল হাসান।
পরে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খাটা জাহালমকে সাত দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দিতে ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
জাহালমকে সাত দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্য অর্থ পরিশোধ করা না হলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আদালত।
এর আগে, পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোর ঘটনায় তাকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ৮৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত ৭ আগস্ট প্রকাশিত হয়।
দুদকের নবীন অনভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে গ্রেফতার করা হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে। তাকে ‘আবু সালেক’ হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা। সে কারণে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই জরিমানা দিতে বলা হয়।
রায়ের কপি হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে জাহালমকে ওই ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আর টাকা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। কিন্তু টাকা না দিয়ে ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান আপিল করেন।
তার আগে জাহালমকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় জড়ানোয় তাকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। কিন্তু সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের জায়গায় জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য দেখছি না।’
দুদকের বিষয়ে রায়ে আদালত বলেন, ‘দুদক একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত স্বাধীন কর্তৃপক্ষ। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন না জড়ানো হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।’
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এছাড়া রুলও জারি করেন আদালত।
পরে একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চাওয়া হয়। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করেন।
পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।
এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালম কাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।
বিষয়টি আদালতে উপস্থাপনের পর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৩৩ মামলার মধ্যে মোট ২৬টিতে ‘ভুল’ আসামি হয়ে জেল খাটার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনের ব্যাখ্যা শোনেন আদালত। এরপর জাহালমকে ২৬ মামলায় জামিন দেন হাইকোর্ট।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও