Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘তারপরও তো করুণা করেছি, আর কত দয়া দেখাব?’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ আগস্ট ২০২২ ১৫:১৬

ঢাকা: ‘যারা আমাকে খুন করতে চেয়েছে, যারা আমার বাবা-মা, ভাইদের হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীদের পার্লামেন্ট সদস্য করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যাচেষ্টার সেই বিচারটা হতে দেয়নি; তারা আমাদের কাছে এত করুণা-দয়া চায় কিভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন? তারপরও তো আমরা করুণা করেছি, আর কত দয়া দেখাব?’

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণ এই আয়োজন করে।

খালেদা জিয়া অসুস্থ তাকে বিদেশে পাঠাতে বিএনপি’র দাবির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আহ্লাদের আর শেষ নাই। পৃথিবীর কোন দেশে আছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি জেলে ছিল…, অন্তত আমি এইটুকু দয়া করেছি, ঠিক আছে বয়োবৃদ্ধ মানুষ বা অসুস্থ হাঁটতে-চলতে, উঠতে-বসতে অসুবিধা, শুলে একজন না ধরলে উঠতে পারে না। জেলখানায় যখন এ অবস্থা দেখেছি তখন ঠিক আছে যেটুকু আমার ক্ষমতা থেকে সেই এক্সুকিটিভ যে পাওয়ার আছে, তার মাধ্যমে তাকে আমি তার বাসায় থাকার সুযোগটা করে দিয়েছি।’

‘এখন ওনি সেজেগুজে মেকআপ নিয়ে একেবারে ভ্রু-টুরু এঁকে হাসপাতালে যান। আর এদিকে আবার তার চিকিৎসকরা রিপোর্ট দেয় খুবই খারাপ অবস্থা? মানে নাকি একেবারে যায় যায়, তার লিভার নাকি পঁচে শেষ? লিভার পঁচলে সাধারণত মানুষ কি বলে? সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না। কি খেলে তাড়াতাড়ি লিভার পঁচে সেটা তো সবাই জানেন?’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমার কথা, আমার কাছে বলে কোন মুখে? জিয়াউর রহমান আমার বাবা-মা, ভাই তাদের হত্যা…, তাদের (খুনিদের) ইমডেমনিটি দিয়ে ক্ষমা করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। এরশাদ এসে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিল। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও একধাপ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে দিয়ে খুনিদের বিচার কাজ শুরু করে।’

বিজ্ঞাপন

এসময় তিনি ১৯৯৮ সালে ৮ নভেম্বর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে বিচারের রায়ে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির হরতাল ডাকার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন।

নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে বক্তৃতা দিলো। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হতে পারবে না। আল্লাহ তার ডাক শুনেছেন, এখন তিনি কিছুই হতে পারেননি। এটা হল বাস্তব কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু তাই না, যেদিন কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার ঘটনা, তখনও খালেদা জিয়ার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগ শত বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এদেশের যত বোমাবাজির পিছনে তাদের যে হাত আছে এতে কোনো সন্দেহ নাই ।’

বারবার যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, তারপরও তো তাদের করুণা করেছি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেছে। আমার তরফ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে, আমি গেছি। আমার মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমাকে ঢুকতে দেয়নি। কত বড় অপমান, তখন শুধু মনে হল যে, তুমি খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে অন্তত দুই মাস, এক মাস পরপরই আমাদের বাসায় যেয়ে বসে থাকতা। চেয়ার পেতেও বসতা না, ওই লবিতে মোড়া ছিল। মোড়া পেতে বসতা। আর এখন আমাকে ঢুকতে দেবে না। আমার গাড়ি থামার সাথে সাথে গেট বন্ধ। আমাকে ঢুকতে দিল না। এই রকম ইনসাল্ট করবে, তারপরও তার জন্য দয়া দেখাতে হবে।’ যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

আসামিকে কে কবে বিদেশে পাঠায়, চিকিৎসার জন্য, প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাহলে তো কারাগারে কোনো আসামি আর বাদ থাকবে না। সবাই দাবি করবে, আমাদেরও তাহলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। আমরা কি সবাইকে পাঠাব?’

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে স্মরণসভা পরিচালনা করেন- মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। সভায় বক্তব্য রাখেন- ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সহ-সভাপতি সাদেক খান, আব্দুল কাদের খান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

করুণা টপ নিউজ দয়া শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর