কলেজছাত্রীকে ‘সংঘবদ্ধ’ ধর্ষণের পর ব্ল্যাকমেইল, আদালতে মামলা
৩০ আগস্ট ২০২২ ২৩:৪৪
রাঙ্গামাটি: জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নে এক কলেজছাত্রীকে ‘সংঘবদ্ধ’ ধর্ষণের পর এবার ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নির্যাতিতা কলেজছাত্রী জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তায় মঙ্গলবার দুপুরে (৩০ আগস্ট) রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেন অভিযোগ আমলে নিয়ে বিলাইছড়ি থানার অফিসরা ইনচার্জকে (ওসি) এজাহার গ্রহণ ও মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ধর্ষণের ঘটনার আসামিরা হলেন- অঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ওরফে এজেন্ট (৩০), রুজন দাশ (২৪), সুমন্ত চাকমা (২৫), স্নেহাশীষ বড়ুয়া (২৪) ও সুজন দাশ (২৮)। আসামিদের সবাই উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ফারুয়া বাজারের বাসিন্দা।
আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এবং আবারও ধর্ষণে বাধ্য হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ ও হত্যার হুমকির পাওয়ায় জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে আসেন। পরে লিগ্যাল এইডের সহায়তায় আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল রাত ৯টায় মামলার বাদী কলেজছাত্রী তার স্থানীয় এক বন্ধুর বাসায় বিঝুর (বৈশাখী উৎসব) দাওয়াত খেয়ে বাসার বাইরে বের হয়। এ সময় অভিযুক্ত পাঁচ আসামি ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধরে নিয়ে জোরপূর্বক এগুজ্যাছড়ি ফরেস্ট অফিসের কালভার্ট ব্রিজের নিচে কলেজছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে।
জানা যায়, কলেজছাত্রীকে ধরে আনার সময় তার বন্ধু ধর্ষকদের অনুসরণ করে ঘটনাস্থলের দিকে আসে। পরে ওই কলেজছাত্রী চিৎকার করে ওঠে। তখন ওই কালেজছাত্রীর বন্ধু এগিয়ে আসে এবং আসামিদের তার কোনো ক্ষতি না করার অনুরোধ জানায়। কিন্তু ওই বন্ধুকেও ওড়না দিয়ে বেঁধে রেখে কলেজছাত্রীকে মারধর ও পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ সময় ৩ নম্বর আসামি সুমন্ত চাকমা ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।
পরবর্তীতে ১ ও ২ নম্বর আসামি বিষয়টি কাউকে জানালে বা মামলা করলে বাদী ও তার পিতাকে হত্যা এবং ধর্ষণের ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। পরে ওই কিশোরী চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের ছাড়পত্রেও ‘গ্যাং রেফ’র বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার পর ২৩ জুন ৩, ৪ ও ৫ নম্বর আসামি আবারও ধর্ষণের হুমকি দেন। ২৮ জুন কলেজছাত্রী বিলাইছড়ি থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নিতে চায় না। পরে ১২ আগস্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কলেজছাত্রী। আজ মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) রাঙ্গামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজির করে কলেজছাত্রীর মামলার আবেদন জানায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী ও বাদীপক্ষের আইনজীবী সালিমা ওয়াহিদা বিষয়টির নিশ্চিত করে বলেন, ‘গণধর্ষণের শিকার কলেজছাত্রীকে ঘটনার পর থানায় মামলা না করলে চাপ প্রয়োগ এবং ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় আসামিরা। পরবর্তী সময়ে আসামিরা কলেজছাত্রীকে ভিডিও প্রকাশ করে দেবে- এমন হুমকি দিয়ে আবারও একইভাবে বাধ্য করতে থাকে। পরে নিরূপায় কলেজছাত্রী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত অভিযোগ আমলে নিলে বিলাইছড়ি থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ ও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
এদিকে, কলেজছাত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিলাইছড়ি থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘মামলার না নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ঘটনার অনেক পরে স্থানীয় এক হেডম্যান অভিযোগটি দিতে এসেছেন। আমি উনাকে বলেছি, ভিকটিম যেহেতু রাঙ্গামাটি শহরে থাকেন সেক্ষেত্রে আদালতে মামলা করতে পারেন কিংবা বিলাইছড়ি থানাতেও মামলা করা যাবে। তবে ভিকটিম ও তার পরিবারকে অবশ্যই আসতে হবে।’
সারাবাংলা/পিটিএম