Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্থির করে তুলেছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ আগস্ট ২০২২ ০০:৩১

ফাইল ছবি: সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তেলের দামটা বেড়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অস্থির করে তুলেছে। ফলে সবকিছুর উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশের মতো। সে কারণে বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব দেশের মত আমরাও জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে ১৪৭ (১) বিধি অনুযায়ী জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আনীত সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি এসেছি দেশের মানুষের উন্নয়ন করার জন্য, কোনো দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য নয়। যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিল, তখন আমরা ক্যানাডিয়ান আদালতে প্রমাণ করি এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করি। আমরা দেশের জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগে নিয়ে আসলাম, তখন এলো কোভিড-১৯। তার পরে যখন পরিস্থিতি কিছুটা সামলে নিলাম এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই পরিস্থিতি বিশ্বের অর্থনীতি ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সব জিনিস আমদানিতে প্রায় ৬০ শতাংশ মূল্য বাড়তি দিতে হচ্ছে। আগের চেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করতে হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৮৩ দশমিক ৩৫ মার্কিন ডলার। এখন গড় মূল্য ১৩২ দশমিক ৫৩ মার্কিন ডলার। কিছুদিন আগে ছিল ১৭০ মার্কিন ডলার। সেইসঙ্গে সারের ক্রয় মূল্য ৭৫ টাকা কেজি। যা ২২ টাকা কেজিতে দিচ্ছি। কেজিতে ৫৩ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সবধরনের সারে কিন্তু আমরা অনেক ভর্তুকি দিচ্ছি। চিনির চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। ৯৬ ভাগ আমদানি করতে হয়। মুসুর ডালের চাহিদা পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন আমদারি করতে হয়। তাও ভর্তুতি দিয়ে বিক্রি করছি। আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১২০ ভাগ। সেইসঙ্গে পরিবহন ব্যয় বাড়ায় ৪০ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতাটাও খুব তিক্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটার পরে এই পার্লামেন্টের চার/পাঁচ জন এমপি আহত হন। আমরা কিন্তু বিএনপির আমলে কোনো কথা বলতে পারিনি। কিন্তু আজ বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা প্রস্তাবের ওপর ব্যাপক আলোচনার সুযোগ পাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যদি কোনো দেশের রিজার্ভ তিন মাসের থাকে তা হলে তাকে বলা হয় ব্যালেন্সিং অবস্থা। আমাদের পাঁচ মাসের রিজার্ভ রয়েছে। বর্তমানে মন্ত্রী এমপিদের যানবাহন কেনা বন্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি কমিটির মিটিংয়ের সম্মানি বন্ধ রাখা হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘সব দিক বিবেচনা করেই আমরা জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করেছি। কেননা বৈশ্বিক সংকট ও মূল্য বাড়ায় আমরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।’

বাপেক্স সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা যখন সরকারে আসি তখন বাপেক্স বলে তেমন কোনো কোম্পানি ছিল না। তখন আন্তর্জাতিক কোম্পানিকে গ্যাস উত্তোলন করতে দেওয়া হতো। তখন থেকে বাপেক্সকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ শেয়ার দিই। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পাঁচটি গ্যাস কূপের সন্ধান পেয়েছি। ২০০৯ সালে আমরা পেয়েছিলম ১ হাজার ৯ মিমি ঘনফুট গ্যাস। এখন বেড়ে হয়েছেন ২ হাজারের ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সমুদ্র সীমা অর্জনের পরে একটি কোম্পানি গ্যাসের সন্ধানে এসেছিল। কিন্তু পরে তারা চলেও যায়। তবে আমরা সমুদ্রে গ্যাসের সন্ধান করে চলেছি।’

পদ্মা সেতুর রিটার্নের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা বিশাল প্রকল্প নিলাম, আর ভাবলাম সেখান থেকে কী রিটার্ন আসবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ আমরা নিজস্ব টাকায় করেছি। গত ৬০ দিনে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা। দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত ঢাকায় চলে আসছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সবার মতো আমরাও কিছুটা বিপদে পড়েছি। জার্মানি তো বলে দিয়েছে কেউ নতুন করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে না। সব দেশে একই অবস্থা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন মূল্যস্ফীতি গত বছরে সর্বোচ্চ বেড়েছে। ব্রাজিলের মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে তা ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাজ্যে গ্যাস ও পানি পর্যন্ত রেশনিং করা হচ্ছে। জাপানেও লোডশেডিং করা হচ্ছে। সেখানে পানি ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপে গ্যাসের ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট দিলাম তখন অর্থনৈতিক সংকটের কথা মাথায় রেখে সাধারণ মানুষের জীবন-যাপনের ভর্তুকির জন্য অর্থ বরাদ্দ ও কর্মসূচি রাখি। আমরা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বজায় রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘এত করোনা গেল, যুদ্ধ চলছে, তার পরেও আমরা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছি এই অর্থবছরে। আমরা রফতানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছি। এক্ষেত্রে ভালো প্রণোদনা দিচ্ছি। আরো প্রণোদনা বাড়াব। ২০২১-২০২২ পর্যন্ত আমদানি একেবারে বন্ধই ছিল। পরে আমদানি শুরু হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেসব ঋণ নিয়েছি তা নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। কোনো খেলাপী হয়নি। উন্নয়ন বাজেটে বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যানবাহন কেনা যাবে না, বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ, আপ্যায়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সম্মানী বন্ধ রাখা হয়েছে।’ সচিবালয়ে বিদ্যুৎসহ সব জায়গায় সাশ্রয় করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

অস্থির প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক পরিস্থিতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর