বেসরকারিভাবে আইটি কোর্সে শীর্ষে যারা
৩১ আগস্ট ২০২২ ১১:০৯
ঢাকা: দেশের তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। অল্প ধারণা নিয়েই খাতটিতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছেন দেশের তরুণ-তরুণী। সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে নানা প্রশিক্ষণ। তবে সরকারি প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতাও অনেক। এদিকে, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বেসরকারিভাবেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বহু প্রতিষ্ঠান, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিমাত্রায় কার্যকর। আইসিটি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। দেশে বেসরকরিভাবে আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে কোডার্সট্রাস্ট, ক্রিয়েটিভ আইটি, ইউ ওয়াই ল্যাব ও বহুব্রীহি’র মতো নানা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিতে শতাধিক কোর্সও রয়েছে। প্রায় সব কটি প্রতিষ্ঠানই অফলাইন (সরাসরি) ও অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
কোডার্সট্রাস্ট: তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার শীর্ষে থাকা কোডার্সট্রাস্ট নামের প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি প্রশিক্ষণার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২ মাস, ৩ মাস ও ৬ মাস মেয়াদী বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এছাড়া তাদের এক বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সও রয়েছে। সরাসরি ক্যাম্পাসে গিয়ে (অফলাইন) ৩ মাসের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিতে শিক্ষার্থীকে ব্যয় করতে হবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। একই কোর্স অনলাইনে নিতে ব্যয় হবে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। টিউটোরিয়াল ভিত্তিক ই-লার্নিংয়ে কোর্স প্রতি খরচ হবে ২ হাজার টাকা। এছাড়া কোডার্সট্রাস্টের বিভিন্ন স্কলারশিপ পোগ্রামও রয়েছে। প্রতিমাসেই কমবেশি স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতি মাসে অন্তত ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী বিভিন্ন উপায়ে ভর্তি হয়ে থাকেন। বনানী, মিরপুর ও ধানমণ্ডিতে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাস রয়েছে।
কোডার্সট্রাস্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউল গণি ওসমানী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ট্রেনিং ‘নট জাস্ট ট্রেনিং, প্লেইসমেন্ট বেইজড ট্রেনিং’। আমরা যে ট্রেনিং দিচ্ছি সেটি ‘ওয়ার্কফোর্স ডেভেলপমেন্ট‘। আমরা শিক্ষার্থী বাছাই থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণের সব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। কে কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবে অনেক সময় তাও নির্ধারণ করে দেই। দেখা যায়, সরকারিভাবে বা ফ্রি প্রশিক্ষণ হলে তাতে শিক্ষার্থীর তেমন আগ্রহ থাকে না। কিন্তু আমাদের প্রশিক্ষণে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে।‘
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকারি ট্রেনিংয়ে সঠিক মনিটরিং থাকে না। অনেক সময় ফ্রি বা স্কলারশিপে ট্রেনিং দেওয়া হয়। দেশে কোয়ালিটি ট্রেনিং এর ঘাটতিও রয়েছে। কে কোন বিষয়ে ট্রেনিং করবে, কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেবে তা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় না। ফলে প্রশিক্ষণটি অনেক সময় কাজে দেয় না। সেক্ষেত্রে বেসরকারি ট্রেনিং অনেক বেশি কার্যকর হয়ে থাকে।’
ক্রিয়েটিভ আইটি: ক্রিয়েটিভ আইটি তথ্য প্রযুক্তি খাতে প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমন্ট করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি ২৬টি কোর্সে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। অফলাইন ও অনলাইনে (ঘরে বসে) দু’ভাবেই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন শিক্ষার্থীরা। কোর্সগুলোর মেয়াদ ৬ থেকে ৮ মাস। অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে খরচ হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর ক্যাম্পাসে গিয়ে বা সরাসরি প্রশিক্ষণ নিতে কোর্স প্রতি খরচ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। যে কোনো কোর্স করলে একইসঙ্গে ফ্রিল্যান্সিংও শিখিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ধানমণ্ডি, উত্তরা ও চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটির শাখা রয়েছে।
জানতে চাইলে ক্রিয়েটিভ আইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মনির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রায় সময়ই স্কলারশিপ দিয়ে থাকি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। নারী, সিনিয়র সিটিজেন ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের স্কলারশিপ দিয়ে থাকি। আমাদের এখানে যারা প্রশিক্ষণ নেয়, তারা ২৪ ঘণ্টাই আমাদের সঙ্গে কানেক্ট থাকতে পারে। কাজ করতে গিয়ে কোনো একটি সমস্যায় পড়লে অনলাইনেই সেই সমাধান নিতে পারে। অর্থাৎ কোর্সে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টাই আমাদের সার্ভিস পেয়ে থাকে। কোর্স শেষ হওয়ার পরও শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা তাদের নানাভাবে সহায়তা করে থাকি।’
ইউ ওয়াই ল্যাব: ইউ ওয়াই ল্যাবের উদ্যোক্তা একজন নারী। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ইউ ওয়াই ল্যাব ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যাদের অনেকই বড় বড় আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৭টি কোর্সে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। অফলাইন ও অনলাইনে (ঘরে বসে) দু’ভাবেই প্রশিক্ষণ নিতে পারে শিক্ষার্থীরা। অফলাইনে কোর্স ভেদে খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। আর ঘরে বসে অনলাইনে কোর্স করতে সাধারণত খরচ ১০ হাজার টাকা। তবে পুরো সেপ্টেম্বর জুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে সকল কোর্সের উপরে ৮৫ শতাংশ স্কলারশিপ সুবিধা। সে হিসাবে অফলাইনে কোর্স করতে খরচ হবে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা আর অনলাইনে খরচ হবে ৪ হাজার টাকা। প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইন, প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং, প্রফেশনাল মোশন গ্রাফিক্স ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কোর্সে প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ইউ ওয়াই ল্যাব জানিয়েছে, ৯টি ব্যাচে প্রায় এক বছর নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি ব্যাচে ২৫ জন নারী শিক্ষার্থী ওই প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
ইউ ওয়াই ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ফারহানা এ রহমান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা নারী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। নারীরা যাতে আইটি খাতে আরও বেশি করে প্রবেশ করে সেজন্য আমরা তাদের বেশি করে স্কলারশিপ দিয়ে থাকি। আমরা ৯৫০ জন নারী শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্কলারশিপ দিয়েছে, যার ফলে নারীরা স্কিল ডেভেলপ করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে এবং ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেসেও সফলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। একইসঙ্গে সব শিক্ষার্থীর জন্যই আমাদের নানা ধরনের অফার থাকে।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চিফ ওপারেটিং অফিসার (সিওও) মো. শাহাদাত হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি তাদের অনেকে রিমোট জব করছে। অনেকেই ফাইভার, আপওয়ার্ক এবং অন্যান্য জনপ্রিয় ফ্রিলান্সিং মার্কেটপ্লেসে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছে। ইউ ওয়াই ল্যাব সর্বদা শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের শিক্ষাদান এবং সাপোর্টে ব্যপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর জুড়ে আমাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে ৮৫ শতাংশ স্কলারশিপ দেওয়া হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা কম খরচে গুণগত মানের প্রশিক্ষণ নিয়ে আইসিটি খাতে প্রবেশ করতে পারবে।
কোডার্সট্রাস্ট, ক্রিয়েটিভ আইটি, ইউ ওয়াই ল্যাব এর বাইরেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বহুব্রীহি, সফটটেক আইটি, নিউ হরিজন, ডিভাইন আইটি, অর্ডিনারি আইটি, আইটি বাড়িসহ বিভিন্ন ছোট বড় প্রতিষ্ঠান। তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কোর্সের মধ্য রয়েছে গাফ্রিক ডিজাইন, এসইও, ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, নেটওয়ার্কিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও এডিটিং, থ্রিডি (3D) অ্যানিমেশন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টসহ নানা কোর্স।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনএস